আসছে উচ্চ ফলনশীল আলু-পাটের নতুন জাত
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩৬:০৮,অপরাহ্ন ১৭ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: উচ্চ ফলনশীল আলু ও পাটের নতুন জাত উন্মুক্ত হচ্ছে। ‘বারি আলু-৮১’ ও ‘বিজেআরআই তোষা পাট-৮’ নামে নতুন এ জাত চাষের জন্য উন্মুক্তের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড (এনএসবি)।সম্প্রতি কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনএসবির সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) আশ্রাফ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রস্তাবিত জাতটি আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র (সিআইপি) থেকে সংগৃহীত। ক্লোনের মধ্য থেকে উৎপাদিত সিআইপি-১০ লাইন থেকে জাতটি করা হয়েছে। জাতটি উচ্চ ফলনশীল, দ্রুত বর্ধনশীল ও ভাইরাস রোগ সহনশীল। প্রস্তাবিত আলুর জাতটি খাবার আলু হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত পাটের জাতটি (বিজেআরআই তোষা পাট-৮) বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত। এটিও দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক ফলনশীল।’বীজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ায় এখন থেকে কৃষকরা আলু ও পাটের এ জাত চাষাবাদ করতে পারবেন। এ দুই জাত কৃষককে আরও লাভবান করবে বলে আমরা মনে করি।’
নতুন আলুর জাতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ আলুর গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন এবং চার-ছয়টি কাণ্ডবিশিষ্ট। ৯০-৯৫ দিনে পরিপক্বতা লাভ করে আলু। এটি খাটো ও ডিম্বাকৃতির। আলুর চামড়া হলুদ ও মসৃণ। শাসের রঙ হালকা হলুদ, চোখ মধ্যম গভীর।
‘বারি আলু-৮১’ উন্মুক্তের আগে ছয়টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ (ট্রায়াল) করা হয়। সেখানে এ জাতের ফলন প্রতি হেক্টরে ৩৯ দশমিক ৬৬ টন। চেকজাত ‘বারি আলু-৭ (ডায়মন্ড)’ এর ফলন প্রতি হেক্টরে ২৮ দশমিক ১ টন। মাঠ মূল্যায়ন দল ট্রায়াল করা ছয়টি স্থানের মধ্যে পাঁচটি স্থানে প্রস্তাবিত জাতকে ছাড়করণের পক্ষে এবং একটি স্থানে বিপক্ষে মতামত দিয়েছে বলেও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি নতুন জাতের ডিইউএস টেস্টও (অনুমোদনের জন্য নতুন জাতের বৈশিষ্ট্য, সমরূপতা ও স্থায়িত্বের পরীক্ষা) সম্পন্ন করা হয়। নতুন আলুর কৌলিক সারি ‘বারি আলু-৮১’ হিসেবে ছাড়ের জন্য কারিগরি কমিটি সুপারিশ করে। কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, জাতটি সারাদেশে চাষাবাদের জন্য ছাড়করণের অনুমোদন দেয় এনএসবি।
নতুন পাটের জাতের বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান, তোষা পাটের জাতের (ও-৪) জিনের প্রকাশ পরিবর্তন করে ‘বিজেআরআই তোষা পাট-৮’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। গাছ লম্বা, গাঢ় মসৃণ ও দ্রুত বর্ধনশীল। পাটের চেকজাত ‘ও-৯৮৯৭’ এর চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। জাতটি ২০১৮-১৯ মৌসুমে ঢাকা, খুলনা ও রংপুরসহ তিনটি অঞ্চলের ১২টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়। ১২টি স্থানে প্রস্তাবিত জাতের গড় পপুলেশন প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৯ লাখ, উচ্চতা ৩ দশমিক ১ মিটার, ব্যাসাল ডায়ামিটার ১২ দশমিক ৭৪ মিলিমিটার। চেকজাতের পপুলেশন প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৫৮ লাখ, উচ্চতা ২ দশমিক ৭৪ মিটার, ব্যাসাল ডায়ামিটার ১১ দশমিক ১৬ মিলিমিটার।
বিভিন্ন পদ্ধতি অনুযায়ী বীজ উৎপাদনের জন্য ১২০-১৪০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। প্রতি শতক জমিতে নাবী বীজ উৎপাদন পদ্ধতিতে তিন-চার কেজি, কাটিং বা ডগা রোপণ পদ্ধতিতে দুই-তিন কেজি এবং চারা রোপণ পদ্ধতিতে দুই-তিন কেজি বীজ উৎপাদন করা যায় বলেও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
মাঠ মূল্যায়ন দল ট্রায়াল করা ১২টি স্থানের মধ্যে ১২টিতেই জাতটিকে ছাড়করণের পক্ষে সুপারিশ করে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি প্রস্তাবিত জাতটির ডিইউএস টেস্ট (অনুমোদনের জন্য নতুন জাতের বৈশিষ্ট্য, সমরূপতা ও স্থায়িত্বের পরীক্ষা) সম্পাদন করেছে। প্রস্তাবিত জাতের ফলন ভারত থেকে আমদানি করা জেআরও-৫২৪ এর চেয়ে ২০ থেকে ২৪ শতাংশ বেশি বলে জানান বীজ অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা।