‘আদালত দ্রুত সচল করুন, নয়ত অপেক্ষা করব না’
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৩:১৩,অপরাহ্ন ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
হরতালের মধ্যে আদালতের কার্যক্রম চালুর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিয়ে সাধারণ আইনজীবীরা সমিতির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবেনা বলে একটি সভায় বক্তব্য এসেছে। এক্ষেত্রে সাধারণ আইনজীবীরা নিজ উদ্যোগে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেবেন বলেও বক্তব্য দিয়েছেন। আইনজীবীরা সমিতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আদালত দ্রুত সচল করুন। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। নয়তি সমিতির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবনা।’
প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম আদালতে অচলাবস্থা বিরাজের পর বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীরা এক সভায় বসে এসব বক্তব্য দিয়েছেন। এসময় আইনজীবীরা নিজেদের অর্থনৈতিক চরম সংকটের কথা তুলে ধরে সমিতিকে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কাতর অনুরোধও করেন।
আইনজীবী সমিতির দুই নম্বর বার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সভায় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী প্রায় ৬’শ আইনজীবী উপস্থিত ছিল। তারা হরতালের মধ্যে চট্টগ্রাম আদালত চালু করার বিষয়ে একমত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। আদালত বন্ধ থাকায় আইনজীবীরা বেকার হয়ে গেছেন, সবার রুটি-রুজির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে সমিতিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হানিফের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আইনজীবী ননী গোপাল দাশগুপ্ত, মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো.ফখরুদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী ঈছা চৌধুরী, মির্জা কছির উদ্দিন ও নূরুল আলম চৌধুরী, বিএনপি সমর্থক আইনজীবী মঈনুদ্দিন খোকন, জামায়াত সমর্থক আইনজীবী আশরাফ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট তছলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত পিপি নাসির উদ্দিন, সুনীল সরকার।
প্রায় ২৬ বছর আগে ১৯৮৯ সালে নেয়া চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একটি সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে কোন রাজনৈতিক দল হরতালের ঘোষণা দিলেই আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেননা। বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা সাম্প্রতিক হরতালে গত দুই মাস ধরে প্রায় অচল হয়ে আছে চট্টগ্রাম আদালত। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সমিতির সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন আইনজীবীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সভায় আইনজীবীরা বলেন, রাজশাহী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, নেত্রকোণা, নাটোরে হরতালে আদালত বন্ধের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে। হরতালে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট চললে জজকোর্ট কেন চলতে পারবেনা। সাধারণ আইনজীবীরা বলেন, আমাদের রুটি-রুজির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক আইনজীবী বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে আইনজীবীদের পরিবার।
তারা বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে এক লক্ষ ৮০ হাজার মামলা বিচারাধীন আছে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার মামলার শুনানি ব্যাহত হচ্ছে। সিভিল মামলাসহ ধরলে ১০ হাজার মামলার শুনানি প্রতিদিন পিছিয়ে যাচ্ছে। জামিন শুনানি হচ্ছেনা। এতে ন্যায়বিচার বিঘ্ন হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ ও ক্ষোভ বাড়ছে। সাধারণ আইনজীবীরা সমিতির উদ্দেশ্যে বলেন, দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিন। নইলে আমরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধ্য হব।
সাধারণ আইনজীবীদের এ বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, সমিতির সিদ্ধান্ত না মেনে কেউ আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিলে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এটা কোন আইনজীবীর করা উচিৎ হবেনা। তবে অপ্রীতিকর কোন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে আইনজীবীদের দাবি নিয়ে সমিতি কয়েক দফা বৈঠকও করেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থিত এবং দলনিরপেক্ষ আইনজীবীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে সমিতি। এনামুল হক বলেন, সমিতির বৈঠক আগামি মঙ্গলবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। আমরা মূলত আইনজীবীদের মধ্যে ঐক্যমত্য সৃষ্টির চেষ্টা করছি।