আগামী মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণের টেন্ডার
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৭:২০,অপরাহ্ন ১৫ জানুয়ারি ২০১৫
অনলাইন ডেস্ক :: বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য কক্ষপথের স্লট ভাড়া নিতে রুশ প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসি। এ জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই স্যাটেলাইট নির্মাণে টেন্ডার ডাকা হবে। আর আগামী তিন মাসের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। আজ বৃহস্পতিবার এক চুক্তির মাধ্যমে এ স্যাটেলাইট চলাচলের কক্ষপথ পায় বাংলাদেশ।
ইন্টারস্পুটনিকের কাছে থাকা ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ কক্ষপথটি ভাড়া নিতে এর আগে প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক চূড়ান্ত চুক্তি করলো বিটিআরসি। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এটিএম মনিরুল আলম এবং ইন্টার স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের মহাপরিচালক ভাদিম ই বেলভ। এসময় বিটিআরসি চেয়ারম্যান, ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনানের বাণিজ্যিক পরিচালক টিমফই এব্রামভ, কারিগরি পরিচালক গ্রিগরি বাইতসুরসহ উভয়পক্ষের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এই দেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া ছাড়াই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কম মূল্যে ব্রডকাস্টিং সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতীরক্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি থাকবে। এর মধ্যে ২০ টি ট্রান্সপন্ডার দেশের ব্যাবহারের জন্যে রাখা হবে এবং বাকিগুলো বিক্রি করা হবে।
সুনীল কান্তি বোস বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রযুক্তির সমাজ গড়ে তুলতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। কেবল অপ্রশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানি করে ধনী রাষ্ট্র হওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যেসব দেশের স্যাটেলাইট নেই তাদেরও সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি দেশের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিগুলো অন্যান্য দেশের কাছে বিক্রি করা হবে। ২০১৭ সালের জুন নাগাদ দেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। চলতি বছরের শেষ দিক থেকে আমরা স্যাটেলাইটের মার্কেটিং শুরু করব। এতে করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর আর অলস বসে থাকবে না। আমরা এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। পর্যায়ক্রমে আরো স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে একটি কোম্পানি দাঁড় করানোর। একটি মাত্র স্যাটেলাইট দিয়ে কোম্পনি চলতে পারে না। প্রাথমিকভাবে আমরা আরো দুটি স্যাটেলাইট তৈরির চষ্টা চালাব।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করবে, তারা সরবরাহ করবে। আগামী ২০১৭ সালের জুন মাস নাগাদ প্রকল্প শেষ হবে এবং একই বছর ডিসেম্বরের মধ্যে উৎক্ষেপণ করা হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিস্টেম বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রাক-ডিপিপি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নীতিগত অনুমোদন দেয় পরিকল্পনা কমিশন। গত বছরের মাঝামাঝি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) পাঠানো হয়। ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রকল্পের অর্থায়ন সংক্রান্ত বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধনও করা হয়।
গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে অরবিটাল স্লট সংগ্রহ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থ ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করবে তারা সরবরাহ করবে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটির প্রাথমিক মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। তবে ডিপিপি অনুমোদন পিছিয়ে যাওয়ায় এর বাস্তবায়নকাল পুনর্নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। এতে সংশ্লিষ্ট স্যাটেলাইটের মূল অংশ তৈরি, উৎক্ষেপণ, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ ও বিমা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় উঠে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে মূল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে উপগ্রহের নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে- উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাজার পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, আইটিইউয়ের সঙ্গে তরঙ্গ সমন্বয়, স্যাটেলাইট সার্ভিস ডিজাইন, স্যাটেলাইট আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, সিস্টেম ডিজাইন, দরপত্র প্রস্তুত, ম্যানুফ্যাকচারিং ও সুষ্ঠুভাবে উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণের কাজ করবে। এ ছাড়া জনবল তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া।
বিটিআরসির হিসাবে, দেশের একেকটি টিভি চ্যানেল বিদেশি স্যাটেলাইটগুলোকে ভাড়া বাবদ বছরে প্রায় দুই লাখ ডলার দেয়। সে হিসাবে বর্তমানে ১৯টির বেশি টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে বছরে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ভাড়া দিতে হচ্ছে। দেশের নিজস্ব উপগ্রহ হলে এ অর্থ দেশেই থাকবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি দেশের জন্য ব্যবহার করা হবে। বাকিগুলো বিক্রি করা যাবে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকলে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি ডলার আয় করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ নির্মাণ করা হবে।