অনলাইন চ্যাট: যৌন ব্ল্যাকমেইলের শিকার অগণিত পুরুষ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৪:৪৪,অপরাহ্ন ২১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে যৌনতার লোভ দেখিয়ে বিশ্বে প্রতিবছর ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে হাজার হাজার পুরুষকে। এই ব্ল্যাকমেইলকে বর্তমানে বলা হচ্ছে ‘সেক্সটরশান’। ইতোমধ্যে ফিলিপাইনসে জমে উঠেছে এ ব্যবসা।
ফিলিপাইনসে ম্যানিলার অনেক বস্তি ও গলিঘুঁজি এখন নতুন এই অপরাধের আখড়া। দেশটির ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য এবং সস্তা হওয়ায় নতুন একটি শিল্পের মত গজিয়ে উঠেছে এই অপরাধ। এদিকে অপরাধী চক্রকে ধরতে সাইবার পুলিশ হানা দিয়ে কম্পিউটার সরঞ্জাম, ব্ল্যাকমেলের নানা তথ্যপ্রমাণ উদ্ধার করলেও সন্দেহভাজন অপরাধীদের অনেকেই এখনও নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।
বিবিসি বাংলা অনলাইন-এর এক সংবাদে জানানো হয়, ব্ল্যাকমেল করার জন্য অপরাধীরা যেসব মেয়েদের ব্যবহার করে তাদের একজন- রোসা। তিনি একসময় এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রোসার বর্ণনায় জানা যায়, কীভাবে অনলাইনে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।
রোসা বলেন, এই চক্রগুলো বিদেশী পুরুষদের খদ্দের হিসাবে ধরার চেষ্টা করে। এদের মন ভোলানোর জন্য আমাদের মতো মেয়েদের তারা কাজে লাগায়। আমার জন্য কাজটা খুবই কঠিন ছিল। আমি খারাপ কাজ করতে কখনই অভ্যস্ত নই। এ কাজে আমার বিবেকের দংশন হচ্ছিল।
অপরাধীরা ভুয়া ছবির সঙ্গে এই মেয়েদের কন্ঠ ব্যবহার করে কৌশলে পুরুষদের আকৃষ্ট করছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় ওয়েবক্যামেরায় চ্যাট করার জন্য। এই চ্যাটে খোলামেলা খুবই ঘনিষ্ঠ যৌনালাপে জড়িয়ে পড়ে অপরাধচক্রের ফাঁদে ধরা দিচ্ছেন পৃথিবীরা নানা দেশের হাজার হাজার পুরুষ। অপরাধীরা এই চ্যাট রেকর্ড করে নিচ্ছে এবং তারপরই শুরু হচ্ছে ব্ল্যাকেমলের পর্ব।
বিশেষজ্ঞ পুলিশ দলের একজন কর্মকর্তা জানান, এই রেকর্ডিং ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চক্রগুলো বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায় করছে।
গত বছর এই বিশেষ ইউনিট তিনটি বড়ধরনের অভিযান চালিয়েছে– শতশত কম্পিউটার জব্দ করেছে এবং বহু লোককে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের আস্তানায় পাওয়া গেছে বড় বড় বাক্সভর্তি স্তুপাকৃতি রসিদের খাম- আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ লেনদেনের প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর রসিদ। যাদের যৌন ব্ল্যাকমেলের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে- তাদের কাছ থেকে এসেছে এসব অর্থ।
পুলিশ হানা দিয়ে ম্যানিলায় কিছু কল সেন্টার পেয়েছে যেখানে তরুণ তরুণীরা যৌন ব্ল্যাকমেলিং-এ বিভিন্ন শিফটে কাজ করছে। এমনকী মোটা অঙ্কের অর্থ এনে দিতে পারলে তাদের বোনাসেরও ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়ে এরা বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে অনলাইনে। আবেদনময়ী নারী ওয়েবক্যামেরায় ঘনিষ্ঠ যৌনালাপের আমন্ত্রণ পাঠাচ্ছে। আর এই ফাঁদে পা দিয়ে রীতিমত পস্তাতে হচ্ছে অনেক পুরুষকে।
এদিকে অর্থের দাবি মেটাতে না পেরে পুরুষদের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে বলে জানা গেছে। যারা এই ফাঁদে পা দিচ্ছে তারা জানছে না ক্যামেরায় যৌন আবেদনময়ী যে সুন্দরী মেয়ের ছবি সে দেখছে সেই মেয়ে বাস্তবের কোনো নারী নয়- তার কন্ঠ আগে থেকে রেকর্ড করা, কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা, বোতামের চাপে তার কথা, তার চাহনি, তার অঙ্গভঙ্গি ফুটে উঠছে কম্পিউটার স্ক্রিনে।
এই অপরাধ চক্রের শিকার অনেক পুরুষই লজ্জায় সামনে আসছেন না। পরিবার ও লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন না পুলিশের কাছে। ফলে নজর এড়িয়ে ম্যানিলার আনাচে কানাচে অনায়াসে চলছে এবং ক্রমেই ফুলে ফেঁপে উঠছে এই যৌন ব্ল্যাকমেইলের ব্যবসা।