২৪ বছরে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছেন রহিমা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৫:২০,অপরাহ্ন ২৫ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
বয়স ২৪ হয়ে গেলেও শিক্ষার আশা এখনো ছাড়েননি নীলফামারীর রহিমা খাতুন। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন রহিমা। তার পরীক্ষা কেন্দ্র নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
রহিমা খাতুন ঝরে পড়া শিশুদের উদ্দেশে চলমান রিচিং আউট অব এডুকেশন প্রকল্পের জলঢাকা বাবুপাড়া আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলে তার রোল নম্বর ৬। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে এসে রহিমা হাসিমুখে জানান, সমাপনী পরীক্ষা তার খুব ভালো হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করে তিনি ভালো ফল করবেন বলে আশা করেন।
নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টারপাড়ার দিনমজুর ফাগুনা মামুদের মেয়ে রহিমা। বাবা মারা গেছেন ৫ বছর আগে। মা আজিরন বেগম। দিনমজুরিসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন আজিরন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে রহিমা সবার বড়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, রহিমার ভাই মিজানুর রহমান (১৮) শারীরিক প্রতিবন্ধী আর ছোট বোন ফাতেমা (১৫) বাকপ্রতিবন্ধী।
রহিমার বয়স যখন ১৪ বছর তখন তার বিয়ে হয়। ২০০৪ সালে সিলেটের ছাতক উপজেলার বাঁশকেলা গ্রামের যুবক গুলজার রহমান শ্রমিকের কাজ করতে এসেছিলেন জলঢাকায়। রহিমার বাবা তাকে ওই যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের এক মাস পর স্বামীর সঙ্গে রহিমা পাড়ি জমান সিলেটে। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন তার স্বামীর আগের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তাছাড়া স্বামী মাদকাসক্ত। স্বামী তাকে ২০০৪ সালে সিলেট থেকে জলঢাকায় এনে দিয়ে চলে যান। আর এদিকে ফেরেননি। রহিমাও আর প্রতারক স্বামীর কথা ভাবেন না। আবার দ্বিতীয় বিয়েও করেননি রহিমা। বরং একটি বেসরকারি সংস্থায় স্বাস্থ্যসেবার প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন।
রহিমা জানান, লেখাপড়া করার জন্য তিনি ২০১০ সালে আনন্দ স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন। রহিমার ইচ্ছা, তিনি একদিন এসএসসি পাস করে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবেন। এসএসসি পাসের পর তিনি সরকারি আয়ার চাকরি পাবেন এ আশায় নিজেকে তৈরি করতে চান।