২০১৪ ঢালিউডে রেকর্ডের বছর
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫১:১২,অপরাহ্ন ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
বিনোদন ডেস্ক :: ২০১৪ সালে ঢালিউড যেন অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু উৎসবমুখর ছিল। উৎসবমুখর বলতে এবছর ঢালিউডে ছবি মুক্তি, নতুন মুখের আগমন মিলিয়ে রেকর্ডের একটা বছর হিসেবে শেষ হচ্ছে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির হিসেবে ছবি মুক্তি পেয়েছে ৭৬টি। এর বাইরেও তাদের অনুমোদন ছাড়া কমপক্ষে একটি হলে চলেছে এমন ছবিসহ মোট ছবির সংখ্যা ৮১। যা কিনা বিগত পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ। এর আগের বছরগুলোর মধ্যে ২০১০তে ৫৭, ২০১১তে ৪৮টি, ২০১২তে ৫১টি এবং ২০১৩তে ৫৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল।
এবছর নায়ক-নায়িকা ও পরিচালক মিলিয়ে প্রায় ২০জোড়া নতুন মুখের আগমন ঘটেছে ঢালিউডে।
বছরের শুরুটা হয়েছিল অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। বছরের প্রথম দুই সপ্তাহ কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। কিন্তু তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছিল ‘দাবাং’। ছবিটি অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত ছিল।
একের পর এক ছবি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হতে থাকে। অমাবশ্যার কালো মেঘে নেমে আসে চলচ্চিত্রশিল্পে। মেঘ কেটে যায় ‘অগ্নি’ মুক্তির পর পরই। বছরের প্রথম ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে স্থান করে নেয় ছবিটি। কিন্তু ছবিটি মুক্তি নিয়ে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাথে দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়েছিল প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে সংস্থাটি।
বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে মুক্তি পায় ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’। যৌথ প্রযোজনায় মুক্তি দেয়া ছবিটি নিয়ে তৈরি হয় নানা বিতর্ক। মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও ছবির পরিচালক অনন্য মামুন। বাতিল হয় অনন্য মামুনের পরিচালক সমিতির সদস্যপদ। ছবিটি ভারতে খুব একটা ব্যবসা করতে না পারলেও বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যবসা করে নেয়।
জুনে মুক্তি পায় ‘তারকাঁটা’। ছবির ব্যবসায়িক সফলতা নিয়ে ফেসবুকে শুরু হয় তোলপাড়। আর এই তোলপাড় শুরু হয় আবদুল্লাহ জহির বাবুর একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে।
রোজার ঈদে মুক্তি পায় শাকিব খানের ‘হিরো-দ্য সুপারস্টার’ ছবিটি। শাকিব প্রযোজিত প্রথম ছবিটি বাংলাদেশের কোনো ছবি হিসেবে প্রথম সপ্তাহে একযোগে মুক্তি পায় ১২১টি হলে। এর আগে মুক্তি পাওয়া শাকিবের অন্য ছবিগুলো খুব একটা ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও ছবিটি এ বছরের ব্যবসা তালিকায় শীর্ষে চলে আসে।
একই ঈদে মুক্তি পায় অনন্ত জলিলের এ বছরের একমাত্র ছবি ‘মোস্টওয়েলকাম-২’। অনন্তের আগের ছবিগুলোর তুলনায় কিছুটা কম ব্যবসা করে ছবিটি।
ঈদের পর পরই মুক্তি পায় সানিয়াতের ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’। ভিন্ন ধারার বাণিজ্যিক গল্প দর্শকদের নজর কাড়ে।
নির্মাণের সময় থেকেই আলোচনায় ছিল ‘কিস্তিমাত’। কোরবানির ঈদে শাকিবের তিনটি ছবির সাথে মুক্তি পেয়েও ব্যবসায়িক সাফল্য ঘরে তোলে ছবিটি। একই ঈদে সেন্সর বোর্ড থেকে আগের দিন নকলের দায়ে নিষিদ্ধ হয়ে পরের দিন আবার সেন্সর পেয়ে যায় ‘হিটম্যান’। ছবিটি শতাধিক হলে মুক্তি পায়।
ঈদের কিছুদিন পর মুক্তি পায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘পিঁপড়াবিদ্যা’। বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কার বিজয়ী ছবিটিকে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত ফারুকীর সেরা ছবি। দৈর্ঘ্যের কারণে হল সংকটে পড়লে ছবিটি ‘বিকল্পপন্থায়’ কয়েকটি জেলায় মুক্তি দেয়া হয়। তারপর একই পন্থায় মুক্তি পায় ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’।
নভেম্বরে মুক্তি পায় জাকির হোসেন রাজুর ‘অনেক সাধের ময়না’। রাজ্জাক কবরীর ‘ময়নামতি’র রিমেক এই ছবিতে অনবদ্য অভিনয় দিয়ে নজর কাড়েন আনিসুর রহমান মিলন।
ডিসেম্বরের শুরুতেই দেশে তোলপাড় হয় নায়িকা হ্যাপির সাথে ক্রিকেটার রুবেলের প্রেম কাহিনী নিয়ে। এরপরই এ বছরে দ্বিতীয়বারের মত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে জাজ মাল্টিমিডিয়া। একইসাথে তাদের প্রযোজিত ‘দেশা-দ্য লিডার’ সেন্সর জটিলতায় পড়ে। সেন্সর বোর্ড পেরিয়ে ছবিটি বছরের শেষ আলোচিত ছবি হিসেবে মুক্তি পায়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গল্প দর্শক দারুণভাবে লুফে নেয়।
এছাড়া প্রথমে বর্ষার মা হবার খবর অস্বীকার করলেও নভেম্বরে পুত্র সন্তানের পিতা হন অনন্ত। পরে তারা নিজেরাই তা মিডিয়ার কাছে স্বীকার করেন । বছরের শেষে এসে নিরবের বিয়ের খবর সবার আলোচনার বিষয়বস্তু হয়। একই সাথে বছর জুড়ে ছিল আমাদের দেশে ভারতীয় শিল্পীদের আনাগোনা। তারা একের পর এক বাংলাদেশি ছবিতে কাজ করেন। এর মাঝে পাওলি দাম, হিরণ, অঙ্কুশ কিংবা নির্মাতা হিসেবে অঞ্জন দত্তের নাম উল্লেখযোগ্য।
এই বছর ছবির সংখ্যায় এগিয়ে আছেন শাকিব খান। তার অভিনীত ছবি ৯টি। এরপর ইমনের ৬টি, বাপ্পির ৫টি, আরিফিন শুভ ও সাইমনের ৩টি করে ছবি মুক্তি পেয়েছে। আর নায়িকাদের মাঝে অপু বিশ্বাস আর মাহির ৫টি করে ছবি মুক্তি পেয়েছে। ববির ৪টি এবং আঁচলের ৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছে।
ছবির সংখ্যা এই বছর রেকর্ড পরিমাণে বাড়লেও খুব একটা বাড়েনি ছবির ব্যবসা। কিন্তু সৃষ্টি করেছে কিছু সম্ভাবনার। এই বছর দর্শক বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক গুণ। কিন্তু দর্শকরা নানা কারণে কিছুটা হতাশও হয়েছেন। গতানুগতিক গল্প, দুর্বল নির্মাণ কিংবা হলের পরিবেশ তাদেরকে বিরক্ত করেছে।
সব মিলিয়ে বলা হচ্ছে আগামী বছর যদি একই ধারায় ভালো গল্পের ছবি মুক্তি দেয়া যায়, তাহলে যে স্বপ্ন দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমিরা অনেকদিন যাবৎ দেখে আসছেন তা পূরণ হতে বেশি দেরি নাই। চলচ্চিত্রের সুদিন শুরু হলো বলে।