হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ লঙ্ঘনক্রমে সুনামগঞ্জের শ্রীমতি বাজারে চাঁদা উত্তোলনের ঘটনায় তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩৪:৫৪,অপরাহ্ন ০৩ নভেম্বর ২০১৪
আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা: হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ লঙ্ঘনক্রমে সুনামগঞ্জের শ্রীমতি বাজারে চাঁদা উত্তোলনকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের নবসৃষ্ট দয়ার বাজারের ভূমিদাতা হাজী আব্দুল হান্নান জেলা প্রশাসক বরাবরে এ অভিযোগটি দায়ের করেছেন। এতে ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের মৃত হাজী ইব্রাহিম আলীর ছেলে ঈসমাইল হাজী,মৃত আশকর আলীর পুত্র আব্দুল কাহার,মৃত কাছই মুন্সীর ছেলে সুরুজ আলী, তেতৈয়া গ্রামের মৃত হাজী আব্দুল মতলিবের পুত্র লুৎফুর রহমান ও মৃত মজর আলীর ছেলে মহসিনগংদেরকে অভিযুক্ত করা হয়।
জানা যায়, অভিযোগকারী হাজী আব্দুল হান্নান,১৯৭৭/১৩ নং রেজিঃ দলিলমূলে শাখাইতি মৌজার ১৬০ নং জেএলস্থিত ৬৩৮ দাগের ০.১৫ একর ভূমি দয়ার বাজারের পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবরে হস্তান্তর করেন। তারই দানকৃত ভূমিসহ ১.০৫ একর ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে দয়ার বাজার। সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত আসনের এমপি এডভোকেট শাহানা রব্বানীর সুপারিশকৃত স্থানীয় শাখাইতি মাদ্রাসার দক্ষিণের মাঠে অবস্থিত উক্ত বাজারটির প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য এলাকাবাসী লিখিত আবেদন করিলে আবেদনের প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহনিয়া রহমান চৌধুরী ২২/১/২০১৩ ইং ০৫.৯১০.০০০.০৩.০০.০৭২.২০১০-১২-১১৩ নং স্মারকাদেশ বলে বাজার অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে আদেশ দেন। আদেশের আলোকে সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি ও জনসাধারনের ব্যাপক চাহিদার প্রয়োজনে দয়ার বাজার নামে একটি নতুন বাজার স্থাপনের জন্য গত ৩০/৫/২০১৩ ইং তারিখে ৮৪ নং স্মারকে পৈন্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার তালুকদার ও সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মনির হোসেন সরজমিন তদন্তক্রমে সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবরে শাখাইতি গ্রামে নতুনভাবে হাটবাজার স্থাপনের অনুমতি চেয়ে প্রস্তাবনা প্রেরন করেন। এমনিভাবে দয়ার বাজারের অনুকূলে প্রশাসনিক অনুমোদনের প্রস্তুতি যখন চুড়ান্ত তখনই পাশ্ববর্তী শ্রীমতিবাজারের নামে সিন্ডিকেটচক্র নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা শুরু করে। তাদের মধ্যে লুৎফুর রহমান বিভাগীয় কমিশনার আদালতে রাজস্ব মিস আপীল ক-৮৩/২০১৩-১১৩৩ (৭) তারিখ ২১/১১/২০১৩ দায়েরের মাধ্যমে নতুন বাজার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আপাতত স্থগিত থাকবে মর্মে আদেশ হাছিল করেন। পরবর্তীতে ৪/৬/২০১৪ ইং উক্ত মিস আপীল মোকদ্দমাটি নথিজাত করে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হয়। স্বার্থান্বেষী মহলের প্রতিবন্ধকতার মুখে স্থানীয় দয়ার বাজার কমিটির সভাপতি শাখাইতি নিবাসী ইব্রাহিম আলী বাদী হয়ে ভূমি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব,বিভাগীয় কমিশনার,জেলা প্রশাসক এবং পৈন্দা তহসিলদারসহ ৮ জনকে বিবাদী করে হাইকোর্ট বিভাগে ৭৬৩৮/২০১৪ নং রিট পিটিশন দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম ও মোঃ আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিগত ১৮ সেপ্টেম্বর মাসিক ২০ হাজার টাকা খাজনায় খাস কালেকশনের জন্য বাদীর অনূকূলে সদয় আদেশ প্রদান করেন। হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে দয়ার বাজারের খাজনা গ্রহনের ব্যাপারে ২৪/৯/২০১৪ ইং,২৫/১০/২০১৪ ইং,২০/১০/২০১৪ ইং ও ২৮/১০/২০১৪ ইং জেলা প্রশাসক বরাবরে বাদীর পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত খাজনা গ্রহনের বিহিতাদেশ না হওয়ায় শ্রীমতি বাজারের চাঁদা উত্তোলনকারীরা গত ২৯ অক্টোবর বুধবার পর্যন্ত সকাল ১১টায় শক্তির দাপট খাটিয়ে পশুর হাট বসিয়ে শ্রীমতি বাজারে বিভিন্ন রেটে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে নেয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের আদেশ থাকার পরও দয়ার বাজারে হাট বসাতে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রতিবন্ধকতা চালায়।
চাদা আদায়কারী লুৎফুর রহমান স্থানীয় শ্রীমতিবাজারে ইতিপূর্বে কালেকশনকারী তেতৈয়া নিবাসী মৃত ওমর আলীর পুত্র শরীফ উদ্দিন,ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব,জেলা প্রশাসক,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব,উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সহকারী কমিশনার ভূমি ও পৈন্দা তহসিলদারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ৪৯৩৩/২০১৪ নং রীট পিটিশন দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারপতি মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোঃ বদরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ৪ জুন শ্রীমতি বাজারে খাস কালেকশনের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। হাইকোর্টের উক্ত স্থগিতাদেশ লঙ্ঘনক্রমে বাদী লুৎফুর রহমানগং সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শ্রীমতি বাজারে গরুর হাট বসিয়ে সরকারকে কোন প্রকার রয়েলিটি খাজনা বা সালামী না দিয়ে একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট গঠন করত: বাজারে আগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মনগড়ামতে চাঁদা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। গত ঈদুল আজহার পূর্বে শ্রীমতি বাজারে গিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ণিত বাজার কাউকে লীজ বা খাস কালেকশনের অনুমতি দেয়া হয়নি মর্মে পৈন্দা তহসিল অফিসের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রঞ্জন রায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অবগত করলেও এখন পর্যন্ত শ্রীমতি বাজারে সিন্ডিকেট চক্রের চাঁদাবাজী বন্ধ হয়নি। ফলে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এচক্রটি দিনের পর দিন চাঁদাবাজীর মাধ্যমে পশুর হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রেখেছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ লঙ্ঘনক্রমে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের শ্রীমতি বাজারে অবৈধ গরুর হাট বসিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়কারী এবং নবসৃস্ট দয়ার বাজারে প্রতিবন্ধকতাকারী এই সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।