স্বপ্নভঙ্গ বিএনপির, দ্বাদশ সংসদকে স্বাগত জানাল আন্তর্জাতিক মহল
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৮:৩১,অপরাহ্ন ১৪ জানুয়ারি ২০২৪
দেশ-বিদেশের নানা চাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে অবৈধ এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করে আসা বিএনপির জন্য শেষ আশার জায়গা ছিল নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক সংস্থা, পর্যবেক্ষক ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর বিবৃতি।
মো: আবদুল্লা আল আমীন
দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ হতে পারে। সেই সঙ্গে এই সরকারকে দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কেউ মেনে নেবে না বলেও দাবি করা হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদেশি সংস্থা, পর্যবেক্ষক ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর বক্তব্য আরও একবার ওই দলটির জন্য হতাশার কারণ হয়েছে। কেননা, নতুন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা বা অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ বা কূটনৈতিক সম্পর্কে বৈরিতা আনার বিষয়ে কোনো দেশ বা সংস্থা কিছুই বলছে না। উল্টো সহিংসতার জন্য বিদেশি বন্ধুদের হারানোর পাশাপাশি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিএনপি।
র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের পর থেকেই বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী থেকে শুরু করে রুমিন ফারহানা এমনকি তাদের লবিস্ট হিসেবে কাজ করে আসা মিলামা ও তার অনুজ জন ড্যানিলোভিজ সবাই দাবি করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ বিএনপির পক্ষে থাকবে। সমর্থন দেবে অগ্নিসন্ত্রাস ও নির্বাচনকে বানচাল করতে দেয়া তাদের কর্মসূচিকে। তাদের বিশ্বাস ছিল, কম্বোডিয়ার মতোই আওয়ামী লীগ সরকার কোণঠাসা ও একা হয়ে যাবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি একেবারেই ভিন্ন বার্তা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেই বার্তার ব্যাখ্যায় ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এশিয়া এবং বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেফরি ম্যাকডোনাল্ড এক টুইটে লেখেন, বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেটমেন্ট: আওয়ামী লীগের বিজয়কে স্বীকৃতি প্রদান, কিছু প্রক্রিয়ার সমালোচনা, সহিংসতাকে নিন্দা জানানো এবং ভবিষ্যতে যুগপৎভাবে সহযোগিতার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার।
সুতরাং বাস্তবিকভাবেই বলা যায়, দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে অনলাইন ও অফলাইনে বিএনপি ও তাদের গুজবকারীরা যে দাবি করছিলেন, তার কোনোটিই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি। উল্টো সহিংসতার জন্য নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে, যার বেশিরভাগের সঙ্গে জড়িত ছিল বিএনপি। বিশেষত চট্টগ্রামে নির্বাচনের দিন সরাসরি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেটমেন্টের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের স্টেটমেন্ট আরও হতাশ করেছে দলটিকে। সেখানে যুক্তরাজ্য বেশ স্পষ্ট করে বলেছে, ‘নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনকালে বেশ কিছু ভয় দেখানো এবং সহিংসতার নিন্দা জানাই আমরা। রাজনৈতিক কার্যক্রমে এগুলোর কোনো স্থান নেই।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস (ওএইচসিএইচআর) থেকে আসা স্টেটমেন্টেও উঠে এসেছে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার কথা। সেখানে বলা হয়, বিরোধী গ্রুপ থেকে অগ্নিসংযোগসহ রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্যও মিলেছে।
এর পাশাপাশি বিএনপির আশার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের বার্তা। যেখানে জনগণের রায়কে তারা মেনে নিয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হলেও সামগ্রিকভাবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে জাপান। তবে নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনায় প্রাণহানিতে জাপান দুঃখ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়াতানাবে মাসাতোর নেতৃত্বে দেশটির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। ওই দলে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকার জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাইরের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন।
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কোবাইয়াশি মাকি তার বিবৃতিতে বলেন, জাপান আশা করে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আরও বিকাশ হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে জাপান। অর্থাৎ বর্তমান সরকারকে সমর্থনের পাশাপাশি জামায়াত-বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের বিবৃতিতে নির্বাচনকালে ও নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানায়। সেই সঙ্গে সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় তারা।
বিবৃতিতে তারা জিএসপি প্লাস অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য প্রকল্পে দেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অ্যাক্সেসসহ রাজনৈতিক, মানবাধিকার, বাণিজ্য এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে চিহ্নিত করে এমন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ কাজ করে যাবে বলে জানানো হয়।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দফতরের মুখপাত্র বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর ও ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব রয়েছে। একটি টেকসই রাজনৈতিক নিষ্পত্তি এবং প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি তৈরি করা দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি সক্ষম করবে।’ সেই সঙ্গে দলগুলোকে মতবিরোধ দূর করে গণতন্ত্রের সপক্ষে কাজ করার আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে। নিশ্চিতভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে রাজপথে চলমান বিএনপির আন্দোলন এই বিবৃতিতে অসমর্থন করা হয়।
তারেক রহমান জনগণের ভোট বর্জনের কথা সগর্বে প্রচার করলেও বাস্তবতা হলো, বিএনপির নির্বাচন বর্জন এবং রাজনীতির নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারা ও পুলিশ হত্যার বিষয়টি কোনো দেশ সমর্থন করেনি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বিএনপি বর্তমানে তাদের সব আন্তর্জাতিক সমর্থন হারিয়েছে এবং একা হয়ে গেছে। মূলত নিজেদের সহিংসতার কারণেই একা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিজেও জানে বিএনপি। আর এ কারণেই তারা নির্বাচনের পর হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি না দিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও দলটির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও নেই জনসমর্থন।