সৌদি বাদশাহ নির্ধারণ নিয়ে হাঙ্গামার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২৩:৩৮,অপরাহ্ন ১৯ নভেম্বর ২০১৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
মধ্যপ্রাচ্যে এখন চলছে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা। ঠিক এ রকম একটি কঠিন সময়ে ৯০ বছর ধরে রাজতান্ত্রিক শাসনে থাকা সৌদি আরবে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আগামী বছরগুলোতে কে হবেন বর্তমান সৌদি বাদশাহর উত্তরাধিকারী সেই কণ্টকাকীর্ণ বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
সৌদি আরব একটি বৃহৎ ও প্রভাবশালী দেশ, ইসলামের দুটি পবিত্রতম মসজিদের অভিভাবক। বিশ্বব্যাপী সুন্নী সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবেও একে বিবেচনা করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া ইরানের প্রভাব ঠেকানোর প্রধান খেলোয়াড় সৌদি আরব। দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী।
সৌদি আরবের বাদশাহ কে হবেন তা নির্ধারণ করে থাকেন আল সৌদ রাজ পরিবারের সিনিয়র প্রিন্সরা।
বাদশাহ আবদুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন ক্রাউন প্রিন্স সালমান। এরফলে প্রিন্স মুকরিন হবেন সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী।
এই তিনজনই সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুলআজিজের, যিনি ইবনে সৌদ নামে পরিচিত, পুত্র।
ইবনে সৌদ ১৯৫৩ সালে মারা যান।
এরপর যে পাঁচজন বাদশাহ হয়েছেন তাদের সবাই ইবনে সৌদের পুত্র।
যদিও ইবনে সৌদের ডজন ডজন পুত্র আছে, তবে এ ধারা তো অনাধিকাল চলবে পারে না।
ইবনে সৌদের কনিষ্ঠ পুত্র প্রিন্স মুকরিন। তার বয়স এখন ষাটের কোটায়।
প্রিন্স আহমেদসহ প্রিন্স মুকরিনের অনেক প্রবীণ সৎ ভাই এবং তার আপন ভাই সালমান এখনো জীবিত আছেন।
প্রিন্স আহমেদ এবং ক্রাউন প্রিন্স সালমান তথাকথিত ‘সুদাইরি সেভেন’ এর অন্তর্গত। এরা হলেন ইবনে সৌদের প্রিয়তমা স্ত্রী হাসা আল-সুদাইরির সন্তান।
সুদাইরি সেভেন এখন পর্যন্ত ইবনে সৌদির সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর জোট।
ধারণা করা হচ্ছে যে প্রিন্স মুকরিনকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নির্বাচন করা হলে তিনি হবেন ইবনে সৌদের সন্তানদের মধ্যে সর্বশেষ বাদশাহ।
তবে বয়সের দিক থেকে জ্যেষ্ঠ হচ্ছেন প্রিন্স আহমেদ।
নিকট ভবিষ্যতে ক্ষমতার মসৃণ পালাবদল নিশ্চিত করার জন্য নজিরবিহীনভাবে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ।
দুজন ক্রাউন প্রিন্স-সুলতান ও নায়েফ বাদশাহ হওয়ার আগেই মারা যান। বাদশাহ আবদুল্লাহও বৃদ্ধ ও ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের অধিকারী। ক্রাউন প্রিন্স সালমানও (৭৮) স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন।
এ জটিলতার অবসানের জন্য গত মার্চে ইবনে সৌদের পুত্র ও নাতিদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আনুগত্য পরিষদ’ এর সাথে বৈঠকে বসেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। সে সময় প্রিন্স মুকরিনকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয় এবং বিধান করা হয় এই নির্বাচন পরিবর্তনযোগ্য নয়।
কিন্তু আনুগত্য কাউন্সিলের বৈঠকে উপস্থিত সব প্রিন্সই প্রিন্স মুকরিনের পদোন্নতিকে সমর্থন করেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধী রয়েছে।
সৌদি জনগণের মধ্যে জল্পনাকল্পা চলছে যে এই প্রক্রিয়ায় ইবনের সৌদের অসংখ্য নাতির মধ্যে কে হবেন বাদশাহ।
যারা এ ব্যাপারে কথার বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন তারা আসলে কিছুই জানেন না, যারা জানেন তারা কোনো কথাই বলছেন না।
তবে যেসব প্রিন্স এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তাদের নিয়েই আলোচনা চলছে।
অবশ্যই বাদশাহ আবদুল্লাহর চারপুত্র এক্ষেত্রে অন্যতম প্রিয়মুখ।
এদের মধ্যে প্রিন্স মুতায়েবকে (বয়স ষাটের কোটায়) ক্ষমতাধর ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ডার এবং মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে গত বছর।
সৌদি আরব বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা জর্জরিত। যুবকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, ইরাক ও সিরিয়া থেকে জিহাদিদের ফেরত আসা, দেশের ভেতরে সামাজিক গণমাধ্যমে আল সৌদ পরিবারের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা এবং শিয়া অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বিশৃঙ্খলা এসবের অন্যতম।
তবে একথা সত্য যে সিনিয়র প্রিন্সরা চাইবেন না যে তাদের বৈরিতার সুযোগে ইবনে সৌদের প্রাসাদে চিড় ধরুক। সৌদের কোন নাতি রাজতন্ত্রের হাল ধরবেন তা নিয়ে বিতর্কটা তাই কৃত্রিমই বলা চলে। প্রাসাদের ভেতরেই এই বিতর্কের অবসান ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, জনসমক্ষে নয়।