সৌদি বাদশাহর বখশিস বাংলাদেশের বাজেটের সমান
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৫:৪৯,অপরাহ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
ডিক্রি জারি করে রাজা-বাদশাহদের যা মনে চায় করার দিন গত হয়নি সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ তা আবার জানিয়ে দিলেন। বাদশাহ সালমান নতুন বাদশাহী পেয়েছেন দিন কয়েক হলো। বাদশাহী তখতে বসে প্রথম সবচেয়ে বড় যে ডিক্রি তিনি জারি করলেন তা সৌদি জনগণের জন্য আপাত খুশির খবর হতেই পারে, কিন্তু বিষ্মিত ও চিন্তিত হয়েছেন গোটা বিশ্বের অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
এক ডিক্রিতে সৌদি আরবের সাধারণের মাঝে বিতরণের জন্য খাজাঞ্চিখানা থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছেন বাদশাহ সালমান। অংকের হিসেবে এই অর্থ দাঁড়ায় ২,৪৯৬,০০০,০০০,০০০ টাকা (১ ডলার= ৭৮ টাকা দরে)। স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশ সরকার ২,৫০৫,০৬০,০০০,০০০ টাকা বার্ষিক বাজেট ঘোষণা করে।
সেই হিসেবে সৌদি বাদশার একটি অনুদানের অংক বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের গোটা বছরের বাজেটের সমান। বাংলাদেশের এই বাজেটকেও অবশ্য বড় অংকের উচ্চাভিলাসি বাজেট বলে করা সমালোচনা রয়েছে বিশ্লেষক মহলে।
তাহলে সৌদি বাদশাহর এই ডিক্রি নিয়ে সমালোচকরা কি বলবেন?
বিশ্বের অর্থনীতি বিশ্লেষকরা কিন্তু কথা বলতে শুরু করেছেন। ইউরোপীয় রাষ্ট্রনেতারা যখন অর্থনৈতিক মন্দার তোড়ে কৃচ্ছ্বসাধনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস যখন বাজেট কর্তনের কথাই বারবার বলছে ঠিক তখন সৌদি আরবের যেনো কোনও সমস্যাই নেই।
সমালোচকরা বলছেন, বাদশাহ হলে আপনি সব পারেন। এক ডিক্রিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেঁটে দিতে পারেন বিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার। নিঃসন্দেহে সৌদিবাসী এতে খুশি। তারা খুশি তাদের নতুন বাদশাহ সালমানকে নিয়েও। রিয়াদভিত্তিক বিনিয়োগকারী কম্পানি অশমোর গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের পরিচালক জন এসফাকিয়ানাকিস বললেন, ‘সৌদিবাসীর জন্য এতো পার্টি টাইম।’
বাদশাহী গ্রহণের পর প্রজাদের মাঝে বখশিস বিতরণের রেওয়াজ রয়েছে। তবে এবার তা একটু বেশি বেশিই হয়ে গেলো। ৩২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের মোট বাজেটের সমান। আর আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি নাইজেরিয়ার বার্ষিক বাজেটের চেয়ে বেশি।
গেলো মাসে বাদশাহ আবদুল্লার মৃত্যুর পর বাদশাহী পান সালমান। দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারি বিভিন্ন পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে, মন্ত্রীদের সরিয়ে দিয়ে বড় বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু এবারের বিষয়টি তার সব উচ্চাভিলাষকে ছাড়িয়ে গেছে বলেই মত বিশ্লেষকদের।
এই অনুদানে প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী, সৈনিক, অবসরপ্রাপ্তরা তাদের মাসিক বেতন ভাতার দ্বিগুন নগদ অর্থ পাবেন। দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী সকল ছাত্র-ছাত্রী সরকারি বৃত্তি পাবে। আরও অনুদান যাবে পেশাদারি সংগঠন, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ও ক্লাবগুলোতে। সৌদি বাদশাহর এই ঘোষণার পর বেসরকারি কিছু কোম্পানিও তাদের কর্মীদের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এতে সাধারণ মানুষের পকেটে যাবে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার।
এ মাসের মধ্যেই সৌদি বাজারের এই পয়সার ঝনঝনানি উপলব্দি করা যাবে। সৌদি আরবের ৫৫ লাখ শ্রমশক্তির মধ্যে ৩০ লাখ সরকারি কর্মচারি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দিয়ে সাধারণের মুখ কিনে নিলেন সৌদি বাদশাহ। এখন দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘণ, রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কমই হবে।
বাজার বিশ্লেষণ বলছে, ঘোষণার পরপরই সৌদিবাসীর মাঝে খরচের বহর বেশ বেড়েছে। নতুন মোবাইল ফোন কিনছেন, হাতব্যাগ কিনছেন, বিদেশ সফর শুরু হয়ে গেছে। যাদের ঋণ ছিলো তা পরিশোধ হয়ে যাচ্ছে, স্বর্ণের মোটা নেকলেস কিনে নিজেরা কিংবা মায়েদের গলায় তুলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ অবশ্য দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বিয়ের জন্য এই টাকা রেখে দিয়েছেন।
সৌদি বাদশাহদের বিলাসিতার মূল অর্থস্রোত আসে তেল বিক্রি থেকে। সরকারের আয়ের ৯০ শতাংশই এই তেল বিক্রির টাকা। তবে তেলের দাম বিশ্বব্যাপী পড়ে যাওয়ায় এই আয় ২০ শতাংশ নেমে গেছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে ২০১৫ সালে একারণে সৌদি সরকারকে ৪৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতিতে পড়তে হতে পারে। আর নতুন এই ব্যয়ের কারণে মোট ঘাটতি হবে ৬৭.২ বিলিয়ন ডলার, যা মোট জিডিপির ৯ শতাংশ।
সৌদি আরবে গড়ে মাথাপিছু মাসিক বেতন ২ হাজার ৪০০ ডলার। এর বাইরে পাচ্ছেন পরিবহন, আবাসন ও ওভারটাইম ভাতা। আর রমজানের বিশেষ বোনাস তো রয়েছেই। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি কিছুটা কম, তবে প্রত্যেক কর্মচারী এই বখশিস হিসেবে ৪ হাজার ৮০০ ডলার করে পাচ্ছেন।