সুরঞ্জিত, কামরুল ও হাছানকে একহাত নিলো ছাত্রলীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪১:১৮,অপরাহ্ন ০৩ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
এবার আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের সমালোচনা করলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। প্রকাশ্য সভাতেই দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদকে এক হাত নিলেন তিনি। ‘ভুইফোঁড়’ সংগঠনের নানা সভা-সেমিনারে এই তিন নেতাকে বেশি দেখা যায় বলেই আপত্তি নাজমুলের।
সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগরের নেতা ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বৈঠক ছিল। আর ওই বৈঠকেই আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঢালেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক।
নাজমুল বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, হাছান মাহমুদ এবং কামরুল ইসলাম বিভিন্ন ভুইফোঁড়া সংগঠনের আলোচনা সভায় অংশ নেন। সেখানে কোন শ্রোতা থাকে না, শুধু গণমাধ্যমে চেহারা দেখানোর জন্য চার/পাঁচজন মানুষের সামনে তারা বক্তৃতা করেন। এতে দল এবং সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়।’
এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, ‘তাদের যদি বক্তৃতা করার এতই ইচ্ছা থাকে, তাহলে ছাত্রলীগকে বললে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে এবং তারা বক্তৃতা করে চলে যাবেন।’
এসময় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এটা অন্যকোন ফোরামে আলোচনা করা হবে। এখানে শুধু ৭ মার্চ সমাবেশ নিয়ে আলোচনা হবে।’
আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদকদের অত্যাচারে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি ঠিকমত পালন করা যাচ্ছে না- অভিযোগ করে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এসএসএফদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর কারণে যেখানে বড়বড় নেতাদের কষ্ট হয় সেখানে দেখা যায় কিছু অপরিচিত লোক বসে আছেন। পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দাবি করেন। তাদেরকে রাজনীতির মাঠে কখনও দেখা যায় না, তাদের কেউ চেনেও না।’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য সমর্থন করেন বৈঠকের সভাপতি মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
অন্যদিকে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের একটি শ্রমিক সংগঠন আছে, যার সহ-সভাপতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী। তারপরও তিনি জাতীয় শ্রমিক লীগকে পাশ কাটিয়ে আরেকটি শ্রমিক সংগঠন করেছেন। এর কোন এখতিয়ার আছে কিনা সেটাও জানতে চাই।’ জবাবে হানিফ বলেন, ‘আজ আমরা শুধু ৭ মার্চের জনসভা কীভাবে সফল করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করব।’
নাজমুল আলমের বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি যৌথসভায় উপস্থিত ছিলাম না। বিষয়টি আমি শুনিনি। কারো শোনা কথায় আমি বক্তব্য দিতে চাইনা।’
আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে অনেকগুলো নামমাত্র সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল- নৈাকা সমর্থক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু একাডেমীর নেতৃত্বে আছেন হুমায়ুন কবির মিজি। মিজির এই সংগঠনে নিয়মিত উপস্থিত হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদের নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক এমএ করিম, জয় বাংলা সাংবাদিক পরিষদের নেতৃত্বে আছেন জাহাঙ্গীর আলম বাবু। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ নামের সংগঠনটি পাঁচভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান দুর্জয়।
এছাড়া বঙ্গমাতা পরিষদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পরিষদ, দেশরত্ন সেবক সংঘ, জননেত্রী পরিষদ, নৌকার নতুন প্রজন্ম, দেশরত্ন সেবক সংঘ নামে আরও অন্তত ৫০টি কাগুজে সংগঠন রয়েছে। নামসর্বস্ব এসব সংগঠনকে আওয়ামী লীগের অনেকেই ‘রাজনৈতিক দোকান’ বলে মন্তব্য করেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রায়ই উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘কি আজ সকল দোকান বন্ধ, নাকি শেষ করে এই দোকানে হাজির হইছো?’