সিলেটে ‘মিডিয়া কভারেজে’ ব্যস্ত নিস্ক্রিয় নেতাকর্মীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২০:২৮,অপরাহ্ন ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
কেউ ব্যস্ত ফটো সেশনে, কেউবা মিছিল না করেই পাঠাচ্ছেন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। অনেকে ছবি সম্বলিত খবর কৌশলে মিডিয়ায় প্রচারে ব্যস্ত। অবরোধেরে এক মাস এভাবেই পার করেছে সিলেট বিএনপি। রাজনীতির ভাষায় ‘মাঠ গরম রাখতে’ এবং কেন্দ্রে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতেই চলমান অবরোধে এমন হাকডাক।
দেশব্যাপী ২০ দলের ডাকা অবরোধের এক মাস পূর্ণ হয়েছে বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি)। লাগাতার অবরোধে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সময় হরতালও আহ্বান করে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। তবে কর্মসূচি ঘোষণার পর পুলিশের ভয়ে মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে ছিলেন পদবিধারী নেতারা। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কর্মী-সমর্থরাও তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ তাদের বাসায় পুলিশি তল্লাশির খবর ও নিন্দার ঝড় বইছে সংবাদ মাধ্যমে।
অন্যদিকে, চলমান অবরোধে স্বেচ্ছাসেবকদল-ছাত্রদল ও শিবির নেতাকর্মীদের একাধিকবার মোকাবেলা করতে হয়েছে পুলিশকে। ঘটেছে সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষণের মতো ঘটনা। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন, আটক হয়ে কারাগারেও আছেন নেতাকর্মীদের অনেকে।
আর যারা সিলেটের রাজপথে মিছিল সমাবেশে থাকার কথা, তাদের এখন খোঁজে পাওয়া দুস্কর। গ্রেফতারের ভয়ে বিএনপির এসব নেতাকর্মীরা এখন আত্মগোপনে। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য এমএ হক বলেন, যেসব নেতাকর্মী আমাদের প্রয়োজন, তারা ঠিকই আমাদের পেয়েছে। আমরা আত্মগোপনে নই।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পক্ষপাতি আমি নই। এ ধরনের কর্মকাণ্ড তৃতীয় কোনো পক্ষ করছে।’ আলোচনায় না বসতে এটা আওয়ামী লীগ সরকারের ষড়যন্ত্র বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, দলের দুঃসময়ে কিছু কিছু নেতা দূরে সরে রয়েছেন। মৌসুমী এসব নেতার কর্মকাণ্ড ইতিহাস ক্ষমা করবে না। দলের এই দুঃসময়ে নেতাকর্মীরা নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর শূন্যতা মর্মে মর্মে উপলব্দি করছেন। ইলিয়াস আলী থাকলে কেউ আপোষকামী রাজনীতি করার সাহস পেতেন না।
এদিকে, সাম্প্রতিক এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা সিলেট বিএনপির আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের বিশ্বাসে ফাটল ধরার অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ০৪ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মান্নান ও কমিটির সদস্য মিফতাহ সিদ্দীকির ছবি সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। তারা নাকি কারাগারে থাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহরিয়া হোসেনের অবর্তমানে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন?
এই খবর প্রচারের পর মাঠে আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অনেকে মন্তব্য করেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টিগোচর করতে আন্দোলনের নামে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে এ ধরনের প্রতিবেদন করিয়ে শেয়ার, লাইক ট্যাগ’র রাজনীতি করছেন নেতারা। একইভাবে গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে সিলেট কোর্ট পয়েন্টে কোকো’র গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন গ্রেফতার এড়াতে কোর্ট পয়েন্টের বদলে কালেক্টরেট মসজিদে জানাযার নামাজ আদায়ের চেষ্টা করেন সিনিয়র নেতারা। ওই সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হয় মহানগর বিএনপি সাবেক সভপতি এমএ হক, জেলা বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিমসহ সিনিয়র নেতাদের।
গত ২৬ জানুয়ারি নগরীতে জেলা ও মহানগর বিএনপি যুবদল, ছাত্রদলের ৬ ইউনিটের ব্যানারে ১১ জনের মিছিল ছিল প্রত্যক্ষদর্শীদের হাস্যরসের খোরাক। মিছিল নিয়ে ফটোসেশনকালে তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। নিমিষেই লাপাত্তা মিছিলকারী নেতারা। গত ২১ জানুয়ারি সিলেট জেলায় ২০ দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বিএনপি নেতারা ছিলেন লাপাত্তা। মিডিয়া কভারেজ পেতে অনেকে অলিগলিতে ফটোসেশন করে পত্রিকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েই ছিলেন দায়সারা। এভাবেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ঘোষিত কর্মসূচি পালিত হয়েছে।