সিলেটের কৃতি সন্তানের গবেষণা : সাবধান ! সুপারি-জর্দ্দা সেবন শরীরে পুষ্টিহীনতা ঘটায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৬:২৩,অপরাহ্ন ২৫ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশে সাধারণত অতিথি আপ্যায়নে কিংবা কোন বৈঠকে বা খাবারের পর পানের ব্যবহার (চিবিয়ে খাওয়া) দেখা যায়। সিলেটসহ দেশের সর্বত্রই শহরে, গ্রামে প্রচুর পান দোকান ও পান সেবনকারী দেখা যায়। যদিও পান গাছের পাতাকেই পান বলা হয়, পান বলতে মুলত পানের সাথে সুপারি (Betel nut, চুন ও নানান রকমের জর্দ্দা (chewing tobacco), খয়ের ইত্যাদি একসাথে বোঝায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গবেষক ডা. মনজুর কাদেরের সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটিতে কর্মকালীন সময়ে সম্পন্ন করা একটি গবেষণা কর্মে দেখা যায় যে, নিয়মিতভাবে সুপারি এবং জর্দ্দা সেবনকারীদের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের অভাব ঘটাতে পারে। বাংলাদেশের চাঁদপুরের মতলব থানার ৭৩০ জন গর্ভবতী মহিলা হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এই ফলাফল উপস্থাপন করেন। ডা. মনজুর কাদেরের গবেষণায় দেখা যায় যে, সুপারি সেবনকারীদের রক্তে ফলিক অ্যাসিডের পরিমান তুলনামূলকভাবে অনেক কম, যারা সেবন করেন না তাদের তুলনায়। এতে পাওয়া যায় যে, যারা দিনে ২-৩ বারের বেশি সুপারি সেবন করেছেন (এমনকি জর্দ্দা ছাড়া) তাদের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতির ঝুঁকি প্রায় তিন গুন বেশি। আরো পাওয়া যায় যে জর্দ্দাসহ সুপারি সেবনকারীদের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের অভাব কয়েকগুন বেশি হতে পারে। তার এই গবেষণা কাজটি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে ”International Journal of Medicine and Public Health”- প্রকাশিত হয়।
গবেষক ডা. মনজুর কাদের বলেন, সুপারি সেবনের এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি শুধু মহিলা নয়, যে কারো মধ্যে হতে পারে, অথচ এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে খুব কম লোকই জানেন। ইতিমধ্যে অনেক গবেষণায় জর্দ্দার (chewing tobacco) স্বাস্থ্য ঝুঁকি (যেমন ক্যান্সারজনক পদার্থ বা কার্সিনোজেন) নিয়ে অনেক গবেষনার খবর জানা যায় কিন্ত সুপারির স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ফলেট বা ফলিক অ্যাসিড ‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’ পরিবারের একটি সদস্য। সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক মহিলাদের শরীরে ফলিক এসিডের ভূমিকা অপরিসীম। ওটা মায়ের গর্ভে ভ্রণের সুস্থ ক্রমবিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গর্ভস্থ শিশুর যথানিয়মে শিশুর বেড়ে ওঠা, মস্তিষ্কসহ স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও সতেজ রাখতে, রক্তের লোহিতকণার পরিপূর্ণতা ও রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে ‘ফলেট’ মা ও শিশুর জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন।
এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলে গর্ভপাত, মৃত সন্তান জন্মদান অথবা খর্বাকৃতির শিশুর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা জাগে বলে তার গবেষণায় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, নবজাতকের বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে; যেমন ঠোঁটকাটা, স্নায়বিক বৈকল্য, বাক-প্রতিবন্ধী বা মানসিক প্রতিবন্ধী ইত্যাদি।
পান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি অতি পরিচিত খাবার হলেও এটার সেবন এখন পশ্ছিম বিশ্বের অনেক দেশে এশিয়ান অভিবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । কিছু সমীক্ষায় ব্রিটেনে বসবাসকারী এশিয়ান অভিবাসীদের মধ্যে পান সেবনের মাত্রা ২৭% – ৪৭%, যার মধ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের (মূলত সিলেটি বাঙালিদের) মধ্যে ৭৮% – ৯৬% পর্যন্ত দেখা গেছে। এমনকি ভারত, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড-এ শতকরা ১৫-২৫ ভাগ মহিলা গর্ভাবস্থায় সুপারি ও জর্দ্দা নিয়মিত সেবন করেন। জর্দ্দা ও সুপারি সেবন কমিয়ে আনা বা বন্ধ করার জন্য গণসচেনতা বাড়ানোর পাশাপাশী সরকারকেও শক্ত নীতিমালা প্রয়োগ করতে হবে বলে তরুণ এই গবেষক মনে করেন।
গবেষক মনজুর কাদেরের বাড়ী বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায়, তিনি বর্তমানে সুইডেনের লুন্দ ইউনিভার্সিটিতে (Lund University) ডক্টরাল গবেষণায় (PhD) কর্মরত আছেন।
গবেষক ডা: মনজুর কাদের, ডক্টরাল গবেষক, লুন্দ ইউনিভার্সিটি, সুইডেন
ই-মেইল manzur.kader@med.lu.se