সিটি নির্বাচনে এজেন্ট ব্যবসা: মোট মেয়র প্রার্থী ৪৮, আসল প্রার্থী কতো?
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৩:৫০,অপরাহ্ন ২৭ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
দেশের তিন সিটি নির্বাচনে এবার মেয়র পদে মোট প্রার্থী ৪৮ জন। প্রশ্ন হল বাস্তবে কয় জন? জানাগেছে, প্রার্থীদের একটি অংশ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন শক্তিশালী প্রার্থীদের কাছে নির্বাচনের এজেন্ট বিক্রির জন্য। তাই তাদের বলা হয় ডামি প্রার্থী। আর এই ডামি প্রার্থীদের বড় অংশই বিক্রি হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাশালী প্রার্থীরা ডামিদের এজেন্ট কিনতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। আর এই বাড়তি এজেন্ট দিয়ে মঙ্গলবার ভোটের দিন কেন্দ্রে যেমন প্রভাব বিস্তার করা যাবে। তেমনি নিরাপত্তা পাস ও যানবাহনসহ নানা সুবিধা নেয়া হচ্ছে। আর এই এজেন্ট ব্যবসায় চট্টগ্রাম শীর্ষে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন প্রার্থীতা বাতিল ও প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশনের হিসেবে এখন ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী ১৬ জন, ঢাকা দক্ষিণে ২০ জন এবং চট্টগ্রামে ১২ জন। তাই মেয়র পদে সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী দাড়িয়েছে ৪৮ জন।
এরমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং কয়েকটি বাম সংগঠনের প্রার্থীদের পরিচিতি আছে। আর বাকিদের সাধারণ ভোটাররা তো চেনেনই না। তারা নিজেরাও নির্বাচনের মাঠে ছিলেন না। অথচ তারা প্রার্থী। তাদের প্রতীক আছে, পোস্টার নেই। ছিল না প্রচারণা। তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা হাজির ছিলেন নিয়মিত।
এরকম প্রার্থীদের কেউ কেউ প্রকারান্তরে স্বীকারও স্বীকার করেছেন যে তাদের দাঁড় করান হয়েছে অথবা দাড়িছেন প্রভাবশালী প্রার্থীদের সুবিধার জন্য।
ঢাকা দক্ষিণের একজন মেয়রপ্রার্থী জানান, ‘প্রতীক বরাদ্দের দিনই থেকেই ব্যবসাটা স্পষ্ট হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে দেখা গেছে একটি আলোচিত প্রতীক চেয়েছেন সাতজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে অন্তত: চারজনকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেন প্রভাবশালী এক প্রার্থী।’
এরকম আরো কিছু প্রার্থী প্রভাবশালী প্রার্থীদের সঙ্গে একই প্রতীক দাবী করে প্রতীক বরাদ্দের দিন ভালই কামিয়েছেন বলে জানান তিনি। এরপর শুরু হয় এজেন্ট বিক্রির ব্যবসা। ডামি প্রার্থীরা আগাম এজেন্ট বিক্রি করে দিয়েছেন প্রভাবশালী কোন মেয়র প্রার্থীর কাছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১৬ জন মেয়র প্রার্থীর একজন হলেন ২৯ দলীয় জোট বাংলাদেশ ন্যাশনাল এলায়েন্স সমর্থিত শেখ শহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে এমন অনেক মেয়র প্রার্থী আছে যাদের তেমন কেউ চেনেন না। নির্বাচনের মাঠেও তারা ছিলনা। এই ধরণের প্রার্থী নিয়ে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে।’ তিনি বলেন, ‘ডামি প্রার্থীর কথা শোনা যায়।’
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সাধারণ ৩৬টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ১০৯৩টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫৮৯২টি। এখানকার মেয়র পদে আরেকজন প্রার্থী কিশোরগঞ্জে বিএনপির সাকে এমপি আনিসুজ্জামান খোকন বলেন, ‘কোন কোন প্রার্থী এজেন্টই দিতে পারবনে না। তবুও এত প্রার্থী হওয়ার কারণ, কেউ শখে দাঁড়িয়েছেন আবার কেউবা পরিচিতি পেতে। আর ডামি প্রার্থীতো আছেই।’
ডামি প্রার্থী আর এজন্ট ব্যবসাটা কী রকম? জানতে চাইলে ঢাকা উত্তরের আরেকজন মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘একজন প্রার্থী একটি কেন্দ্রে যতটি পোলিং বুথ থাকে ততজন নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন। এর বেশি নয়। আর এই এজেন্টরা ভোট কেন্দ্র এবং বুথে ঢুকতে পারেন। প্রভাবশালী প্রার্থীরা ভোট কেন্দ্র এবং বুথে আরো বেশি এজেন্ট নিয়োগের জন্য ডামি প্রার্থীদের কাজে লাগান। তারা অর্থের বিনিময়ে ডামি প্রার্থীর এজেন্টদের কেনেন। আর ভোটের দিন তারা আসলে কাজ করেন প্রভাবশালী প্রার্থীর হয়ে।’ তিনি বলেন,‘তবে এই ব্যবসাটা নতুন নয়। এই ব্যবসা থেকে একজন ডামি প্রার্থী অনায়াসে ১০/১৫ লাখ টাকা আয় করতে পারেন।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৯০টি, মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫,৩৫৮টি। এখানকার ২০ জন মেয়র প্রার্থীর একজন হলেন বাংলাদেশ মেস সংঘ সমর্থিত মো. আখতারুজ্জামান আয়াতুল্লাহ।
আখতারুজ্জামান আয়াতুল্লাহর জানান, ‘কিছু ভোট কেন্দ্রে এজন্ট দিয়েছি।’ তাহলে বাকি কেন্দ্রের কী হবে , অন্য কোন প্রার্থীর কাছে এজেন্ট বেঁচে দেবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন কোন প্রার্থী হয়তো এমন কাজ করেছে। এই কারণে তারা মাঠেও ছিলনা। আমিতো মাঠে আছি।’
তিনি জানান, ‘কোন কোন প্রভাবশালী প্রার্থী সুবিধার নির্বাচনে ডামি প্রার্থী দাড় করিয়েছেন। আবার কোন কোন প্রার্থী দাঁড়িয়েছনই এজেন্ট ব্যবসা করার জন্য।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থী ১২ জন। তাদের মধ্যে ৪/৫ জন ছাড়া বাকিদের তেমন কেউ চেনেনন না। এখানে ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২২টি। আর ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫৩৫৭টি। এতগুলো ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে কী না জানতে চাইলে এজন মেয়র প্রার্থী সাজ্জাদ দোহা জানান,‘ ২০১০ সালেও আমি মেয়র নির্বাচন করেছি। তখন ৫০ ভাগ কেন্দ্রে একজন করে এজেন্ট দিয়েছিলাম। এবারও সেরকমই দিচ্ছি’
তবে তিনি জানান, ‘গত মেয়র নির্বাচনে চট্টগ্রামে প্রার্থী ছিল ছয় জন , এবার ১২ জন। এবার ডামি প্রার্থী বেশি। অনেকেই এজেন্ট বিক্রি করেছেন বলে আমার ধারণা। অতীতেও এরকম হয়েছে।’ তাঁর কথা,‘ এবার চট্টগ্রামে এজেন্ট কেনার জন্য ডামি প্রার্থীদের কদর আগের চেয়ে বেশিই ছিল, যা দু:খজনক।’
নির্বাচন সংশিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে শুধু মেয়র নয় কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবেও এবার তিন সিটি কর্পোরেশনে ডামি প্রার্থীর ছড়াছড়ি। তবে এনিয়ে চেষ্টা করেও নির্বাচন কমিশনের কোন মন্তব্য জানা যায়নি।