সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজপথে নামছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৭:২৩,অপরাহ্ন ৩১ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
শনিবার দুপুরে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন দেশের সর্ববৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ ও পাইকারী কাপড়ের বড় বাজার টেরি বাজারের ব্যবসায়ীরা।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসে সমস্যার সমাধানের অনুরোধ জানান। এছাড়া ছয় মাসের ব্যাংক সুদ মওকুফেরও দাবি জানান তারা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন,‘হরতাল-অবরোধ পালন করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু হরতাল-অবরোধের নামে ব্যবসায়ীরা কেন জিম্মি হবে? আমারতো অধিকার আছে পণ্য বিক্রি করার, নির্দিষ্ট গন্তব্যে পণ্য পৌঁছানোর। আমারও অধিকার আছে ব্যবসা পরিচালনার। ’
তিনি বলেন,‘রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করেন। ব্যবসায়ীরা যদি পণ্য বিক্রি করতে না পারে, পণ্য যদি ঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে না পারে তাহলে ব্যবসায়ীরা ঋণগ্রস্থ হয়ে যাবে। ঋণগ্রস্থ হলে ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হয়ে যাবে। আগামী দুই কোয়ার্টার ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণের সুদ দেবে না। সুদ দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রী বরাবরে চিঠি দেওয়া হবে। ’
মাহবুবুল আলম বলেন,‘ব্যবসায়ীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে হরতাল অবরোধসহ রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে ব্যবসায়ীরা।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন,‘রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ব্যবসায়ীদের পণ্যের উপর কেন নাশকতা চালানো হবে? প্রতিদিন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে।’ তিনি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানান।
চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী বলেন,“ব্যবসায়ীদের অবস্থা কেউ বুঝতে চায় না। ব্যবসায়ীদের অবস্থা হয়েছে ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ’ আমাদের আর যাতাকলে পিষবেন না। ব্যবসায়ীরা রাজনীতির উর্ধ্বে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতে একদিন দেরি হলে প্রতিদিন ২০ হাজার ডলার গুনতে হয়। আমাদের রাজনীতিবিদরা সে খবর রাখেন না। অবিলম্বে রাজনৈতিক সহিংস পরিবেশ বন্ধ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে ব্যবসায়ীরা।”
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, দুইটি বড় রাজনৈতিক সংগঠনের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিণত হয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাদের ক্ষমতালিপ্সার খেসারত ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। অর্থনীতি শেষ হয়ে গেলে রাজনীতি থাকবে না। ব্যবসায়ীরা অর্থ যোগান দেয় বলে আপনারা রাজনীতি করতে পারেন। সুতরাং ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে আপনাদের রাজনীতিও বন্ধ হয়ে যাবে।
তারা বলেন, হরতাল-অবরোধে ব্যবসা বন্ধ। কর্মচারীদের বেতনের টাকা যোগাতে অক্ষম হয়ে ছাটাইয়ের চিন্তা করছে ব্যবসায়ীরা। কারণ দিন দিন ঋণের বোঝা বাড়ছে সঙ্গে বিভিন্ন করও দিতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন, নয়তো সংলাপে বসুন। আলোচনায় বসলে ক্ষমতা চলে যাবে না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করুন। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ব্যবসায়ীদের পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
মতবিনিময় সভায় কয়েক দিনের মধ্যে রাজপথে নামতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল হক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবদুস সালাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক কামাল মোস্তাফা চৌধুরী, চাকতাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুহাম্মদ জামাল হোসেন, ব্যবসায়ী নেতা স ম বখতিয়ার, চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালামত আলী, টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, চাকতাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হারুন রশিদ, চট্টগ্রাম রাইচ মিলস সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমদ, আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতা মো. সোলাইমান, মুরাদপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন তালুকদার, চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সহ সভাপতি স্বপন কুমার সাহা।