তেল অপসারণে ধীরগতি সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪২:১৫,অপরাহ্ন ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪
অনলাইন ডেস্ক : সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ট্যাংকারডুবির ঘটনায় তেল অপসারণের ব্যবস্থা নিলেও ইতোমধ্যেই নদীর সাথে সংযুক্ত খালগুলোতে প্রচুর পরিমাণে তেল ছড়িয়ে পড়েছে। জোয়ার-ভাটার সাথে শ্যালা নদীতে ছোপ ছোপ তেল ভেসে বেড়াচ্ছে। ইতোমধ্যেই সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
শনিবার মংলায় সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। নদীতে ট্রলারের মাধ্যমে দেখা যায়, বনের গাছ-গাছালি ছাড়াও কাকড়া-সাপের শরীরে লেপ্টে রয়েছে তেলের প্রলেপ।
স্থানীয়রা বলছেন, দুই মাস আগেও শ্যালা নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে দু’টি কুমির ছাড়াও হরদম ডলফিনের দেখা মিলতো। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে কুমির দু’টিসহ ডলফিনের আর দেখা মিলছে না। তারা জানান, গত দুই মাস আগেও চাঁদপাই বনফাঁড়ির জয়মনি ঠোঙ্গা নামক স্থানে মাঝে মাঝে বাঘ দেখা যেতো।
শ্যালা নদীর দু’পাশ্বের নদীর পাড় এলাকায় গজে ওঠা অসংখ্য গাছপালার মূল, ডাল-পাতাসহ গাছগুলোর ফাঁক-ফোকরে তেলের প্রলেপে ঢাকা পড়েছে। সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষন সুন্দরী গাছ, গোলপাতাসহ বিভিন্ন ছোট-বড় গাছগুলো তেলের কালো আবরণে ছেয়ে গেছে।শাস মূলসহ সুন্দরী বিচের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শ্যালা নদীতে অবস্থানরত জেলেরা জানান, নদীতে তারা নিয়মিত মাছ শিকার করে আসলেও এই ঘটনার পর থেকে নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।এ সময় দেখা যায়, জেলেরা মাছ না ধরে তেল আহরণেই ব্যস্ত।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নদী থেকে গ্রামবাসীদের দ্বারা প্রায় ১৮ হাজার লিটারের মতো তেল সংগ্রহ করা হয়েছে। আর গতকাল শুক্রবার সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ হাজার দুইশ’ লিটার তেল।
এদিকে তেল ক্রয় করা এক ডিপো সূত্রে জানা গেছে, শনিবার মাত্র তেল কেনা হয়েছে মাত্র ৫০০ লিটার।
শনিবার সকাল থেকে শতাধিক নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করে বন বিভাগ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা। এ বিষয়ে চাঁদপাই বনফাঁড়ির সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, বন বিভাগ তেল অপসারণের এই উদ্যোগ নিয়েছে। যার সাথে স্থানীয়রাও যোগ দিয়েছেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সচিব ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা শ্যালা নদীর অনেকগুলো পয়েন্ট ঘুরে দেখেছি। প্রথম দিন থেকে তেলের পরিমান অনেক কমে এসেছে। আস্তে আস্তে আরো অনেক কমে যাবে। এছাড়া তেল কচুপানার সাথে লেগে কমে গেছে। আগের মত খারাপ অবস্থা নেই। স্থানীয় জনসাধারণসহ বন বিভাগ তেল উত্তোলন করছেন।
তেল পানির নীচের লেয়ারে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নীচে যাবে না কারণ এটি পানির চেয়েও হালকা।’
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা অন পেমেন্টে স্থানীয় লোকদের দিয়ে তেল অপসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া এখানে বেসরকারী এনজিওগুলো কাজ করছে। আগে যে অবস্থা ছিল তা থেকে অনেক সাম্ভাবিক হয়ে আসছে।
সকাল ১১টার থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, একশটি নৌকাসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের দু’টি ছোট জাহাজের মাধ্যমেতেল ও তেলমাখা বর্জ্য সরানোর কাজ চলছিল। এছাড়া বন বিভাগের এই উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকেও সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় তেল সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
এদিকে দুপুরে সুন্দরবনের শ্যাওলা নদীতে ট্রাংকার ডুবির স্থান ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত নৌ-মন্ত্রী আসার কারণেই আজ থেকে তেল ও তেলমাখা বজ্য অপসারণে উদ্যোগী হয়েছে বন বিভাগ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা বলছেন, যদি জাহাজ ডুবির ঘটনার পরই তেল অপসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হতো তবে শ্যালা নদীতে ভয়াবহভাবে তেল ছড়িতে পড়তো না।
এছাড়া তেল ছড়িয়ে পড়া রোধে রাসায়নিক ছিটানোর কথা বলা হলেও এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে গত মঙ্গলবার ভোরে সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি তেল নিয়ে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামক তেলের ট্যাংকার ডুবে যায়। তেল ছড়িয়ে পড়া বন্ধে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিশাল এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের পরিবেশ।