সরকার সমর্থক ২৩০ চিকিৎসক অবৈধ মোহনার মালিক
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫৪:৪৬,অপরাহ্ন ০২ ডিসেম্বর ২০১৪
গতকাল হাসপাতালটির প্রধান ফটক বন্ধ দেখা যায়। ভেতরে পাহারারত কর্মীরা কথা বলতে রাজি হননি। ফটকে একটি কাগজে লেখা: ‘মোহনা হাসপাতাল লিমিটেড সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।’
গত শনিবার রাতে সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীকে অজ্ঞান অবস্থায় প্রথমে এই মোহনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকায় তাঁকে অন্য হাসপাতালে নিতে বলা হয়। এরপর পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি মারা যান।
সেখানে জগ্লুল আহ্মেদের যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোশাররফ হোসেন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) এ বি এম হান্নানের নেতৃত্বে একটি দল গত সোমবার হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। দলটি জানতে পারে, কোনো অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতালটি চলছে।
হাসপাতাল পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) স্নায়ুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবিব বলেন, ‘২৩০ জন চিকিৎসক এই হাসপাতালের মালিক। এঁদের প্রত্যেকের শেয়ার আছে।’
একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিকদের অধিকাংশই স্বাচিপের সদস্য। স্বাচিপের মহাসচিব ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইকবাল আর্সলান এঁদের একজন। তিনি বলেন, দলীয় চিকিৎসকদের অনুরোধে তিনি এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে অনুমোদন না থাকার বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না।
অনুমোদন না নিয়েই হাসপাতাল চালানোর বিষয়ে আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই মোহনা ডায়াগনস্টিক কেন্দ্র চালিয়ে আসছি। একই নামে হাসপাতাল করতে আলাদা অনুমোদনের দরকার হবে, এটা জানা ছিল না।’
মোহনা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএসএমএমইউয়ের নাক, কান, গলা বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছি।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক বলেন, ‘আইন জানা ছিল না, আবেদন করেছি—এসব কোনো অজুহাত হতে পারে না। মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তের পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক চালু করতে হলে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই হাসপাতাল বা ক্লিনিক পরিদর্শন করে। আইন অনুযায়ী শর্ত পূরণ করলে তারপর অনুমতি দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মোহনা হাসপাতালকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কোনো অনুমতি দেয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জগ্লুল আহ্মেদের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি অনুমোদনহীনভাবে হাসপাতাল চালানোর বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে কমিটি।
আহসান হাবিব ও মোস্তাফিজুর রহমান স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মালিকদের একটি বড় অংশ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএমএমইউয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এঁরা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চাকরি করলেও সেখানে সময় কম দেন, মোহনা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে কোনো ব্যবস্থা নিতে সাহস দেখায় না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকেরা অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতাল চালাচ্ছেন জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান।