সরকার ইনক্লুসিভ নির্বাচনের দাবি মানছে না: খালেদা জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৪:৩৫,অপরাহ্ন ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
অনলাইন ডেস্ক:: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন যে, সরকার ইনক্লুসিভ (সবদলের অংশগ্রহণমূলক) নির্বাচনের দাবি মানছে না।
বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
বক্তব্যের শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান এবং নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া।
এরপর তিনি বলেন, সরকার জনগণের ওপর একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। জাতীয় সরকার বিরোধী দলবিহীন হয়ে পড়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কোনো বিরোধীদল অংশগ্রহণ করেনি।
খালেদা বলেন, নতুন ও তরুণ ভোটাররা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এভাবে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা আকড়ে রেখেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ ও সব বিরোধীদলের চাওয়া সত্ত্বেও সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি মানছে না।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অভিযুক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, রাজনীতির ভাষা এখন কলুষিত। আপনারা যে ভাষায় কথা বলছেন, যেসব কাজ করছেন, তা ভবিষ্যতে ভালো হবে না। তাই বুঝে শুনে কথা বলবেন ও কাজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাকে নাকি একেবারে মাইনাস করে দেবেন। যারা আগে মাইনাস করতে চেয়েছে, তারাই একসময় মাইনাস হয়ে গেছে। আমাকে মাইনাস করতে পারে একমাত্র জনগণ।
গাজীপুরে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় সরকার ও প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে খালেদা বলেন, কোন কর্মসূচিই বিরোধীদলকে করতে দেওয়া হচ্ছে না।
খালেদা বলেন, ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। ৠাব আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। একটি অংশ ভাড়াটিয়া খুনির মতো আচরণ করছে।
এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে ৠাবের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন।
খালেদা জিয়ার সাত দফা
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থার অবসান ঘটানো না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই সংকট উত্তরণে অনতিবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ, ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই।
এ লক্ষ্যে সরকারের উদ্দেশে সাত দফা প্রস্তাব রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন। উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো- জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।
নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। যেন জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়। সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।
নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে।
সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া সকল সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।