সমুদ্র অঞ্চল নিরাপত্তায় দশ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৫:৪৭,অপরাহ্ন ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪
অনলাইন ডেস্ক: সমুদ্র অঞ্চলকে রক্ষা করা এবং সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে অন্তত দশটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
এই দশ চ্যালেঞ্জ হলো:
১। বঙ্গোপসাগর ঘিরে মানব পাচার রোধ
২। আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসার রুট বন্ধ করা
৩। সমুদ্র-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা
৩। অস্ত্র ব্যবসায়ীর পথ বন্ধ
৫। অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধ
৬। সমুদ্রকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ
৭। সমুদ্রে দুর্ঘটনা
৯। ডিজাস্টাররোধ
৯। সমুদ্র দূষণরোধ
১০। জলদুস্যতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা ইত্যাদি।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমুদ্র ঘিরে সমন্বিত জরিপ, গবেষণা ও সমুদ্রবান্ধব নীতি জরুরিভাবে গ্রহণ করা দরকার। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যাধুনিক নৌবাহিনীতে আরও এয়ারক্র্যাফট, হেলিকপ্টার, সাবমেরিন, দ্রুতগামী টহলবোটসহ নানা সুবিধা সংযোজনের কথা বলা হয়।
ব্লু ইকোনমির নতুন সম্ভাবনাকে সুচারুভাবে ব্যবহার করতে হলে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। সমুদ্রসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে বাধ্য। বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা ঘিরে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি এখন উপযুক্ত সময়। সমুদ্রজয়ের মধ্য দিয়ে দেশের ইকো-ট্যুরিজমে আসবে বিপ্লব। সমুদ্র এলাকা নিরাপত্তায় পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
এ ছাড়া পরস্পরের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতাও জরুরি। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের নৌ ঘাঁটি বানৌজা ঈশা খাঁর কমান্ড মেসে ‘সমুদ্রজয়ের নিরাপত্তা ও জাতীয় অর্থনীতিতে সমুদ্রসম্পদের গুরুত্ব’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম দিনে বক্তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশন্স) রিয়ার অ্যাডমিরাল এএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী। এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন কমডোর কমান্ডিং বিএনএন ফ্লোটিলা খালেদ ইকবাল। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেরিন ফিশারিজ বিভাগের পরিচালক নাসির উদ্দিন মো. হুমায়ুন, ক্যাপ্টেন এএসএম আফজালুল, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের উপ-মহাপরিচালক কমডোর ইয়াহিয়া সাঈদ, ক্যাপ্টেন মীর ইমদাদুল হক ও ড. এম শাহাদাত হোসেন।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্যে কমডোর খালেদ ইকবাল বলেন, সমুদ্রজয় আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সমুদ্রজয়ের পর বিশ্বের অনেক দেশই বাংলাদেশকে ঘিরে নতুনভাবে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশন্স) আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, সমুদ্রজয় আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মেরিটাইম পলিসি এখন অত্যন্ত জরুরি। সমুদ্র ঘিরে নিরাপত্তায় কৌশলগত পথনকশা সময়ের দাবি। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের একমাত্র লাইফলাইন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধান গেটওয়ে।
সমুদ্রবিজয় ঘিরে এখন জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থ, জাতীয় নিরাপত্তা, কূটনীতি, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও নিজস্ব সম্পদের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া সমুদ্র ঘিরে আমাদের ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। আরও রয়েছে অন্যান্য খনিজ সম্পদ। সমুদ্র ঘিরে নিরাপত্তাহীনতা দূর করার বিষয়টি কোনো একক সংগঠন ও দেশের কাজ নয়। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
সেমিনারে এম নাসির উদ্দিন হুমায়ুন বলেন, সমুদ্রে আমাদের বিশাল মৎস্যসম্পদ রয়েছে। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মৎস্যসম্পদ সঠিক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী সমুদ্রতট থেকে ৪০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা নৌকা মাছ ধরতে যায়, তার অধিকাংশের কোনো নিবন্ধন নেই। তাদের সমুদ্রে মাছ আহরণকে ঘিরে নানা অনিয়ম দূর করাও সম্ভব হয় না।
সেমিনারে অন্যরা বলেন, ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাকে সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হলে নৌবাহিনীর কর্মপরিধি আরও বাড়াতে হবে। জনবল ও বাজেট সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রায়ই পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের মাছধরা ট্রলার ও নৌকা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢোকে। এটা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।
বিভিন্ন সময় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সমুদ্র ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি উপস্থিত হয়নি। এখন সময় বদলেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার সমুদ্র ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করছে। সমুদ্র অর্থনীতি ঘিরে পাল্টে যাবে বাংলাদেশের চেহারা। সরকার ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে এগিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সমুদ্রজয়ের পর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এবং ব্লু ইকোনমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এখন সুনির্দষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া খুবই প্রয়োজন।