সব জঙ্গি এবার জুনুদে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৪:১২,অপরাহ্ন ০১ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
এবার একই ব্যানারে মিলিত হচ্ছে আনসারুল্লাহ, জেএমবি ও হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মীরা। সম্প্রতি গ্রেফতার জঙ্গিরা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন এমন তথ্য। নৃশংসতার জন্য সম্প্রতি সারাবিশ্বে আলোচিত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ‘আইএসআইএস’-এর আদর্শিক পথ ধরে কথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ‘জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ’ নামের জঙ্গি সংগঠনের ব্যানারে জড়ো হচ্ছে। এ জন্য পরস্পরকে উৎসাহিতও করতে দফায়-দফায় বৈঠকও করছে জঙ্গিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দারা জানান, দেশে এ পর্যন্ত সাতটি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ও হিযবুত তাহরীর দেশে ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, সেসব জঙ্গি সংগঠন এরইমধ্যে বিলীন হওয়া পথে। নিষিদ্ধ অন্য চারটি জঙ্গি সংগঠন হচ্ছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) ও শাহাদাত আল হিকমাকে।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে হিযবুত তাহরীর কিছুটা ব্যতিক্রম। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হিযবুত তাহরীরের লক্ষ্য হলেও নাশকতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ক্ষমতাচ্যুত করাই জেএমবি ও আনসারুল্লাহ’র লক্ষ্য বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হেযবুত তওহিদ, উলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি), ইসলামি সমাজ, তৌহিদ ট্রাস্ট, তা-আমির উদ-দ্বীন বাংলাদেশ (সংগঠনটিকে ‘হিজবে আবু ওমর’ নামেও ডাকা হয়), আল্লার দল, কালেমা-ই জামাত, হিযবুল মাহাদী, জামায়েতুল মুসলেমিন ও ইসলামি দাওয়াতি কাফেলার সদস্যরাও আইএস-এর কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত হচ্চে বলে তথ্য পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
গত শনিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আবদুল্লাহ আল গালিবকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, তার গড়ে তোলা জঙ্গি সংগঠন ‘জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ’র ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক ‘আইএস’ ও ‘জুনুদ আল শাম’-এর আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। সর্বশেষ আনসারুল্লাহ’র সক্রিয়া সদস্য মাহফুজুল ইসলাম শামীম গ্রেফতার হন গোয়েন্দাদের হাতে। তিনি ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই ও আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির অপারেশন কমান্ডার ছিলেন। তিনি প্রথমে জেএমবি’র সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে নেতৃত্বের মতানৈক্যের কারণে আনসারুল্লাহ’র সঙ্গে জড়িত হন। এর আগে গত ২৫ মে আইএস-এর বাংলাদেশ সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বেগ ও সদস্য সাকিব বিন কামালকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ’র ব্যানারে জঙ্গিরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছিল বলে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি গালিব তাদের জানিয়েছেন। গালিব প্রথমে হিযবুত তাহরীর করত। পরে এই নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলে আইএস-এর জন্য কর্মী সংগ্রহ ও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর কর্মীদের এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ করতে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
শেখ নাজমুল জানান, জঙ্গিরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস-এর নির্দেশিত খিলাফত বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র এই কথিত জিহাদি সংগঠন ‘জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ’ গড়ে তুলছিল। এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের টার্গেট করে হত্যা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও নাশকতা চালিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা।
সূত্র : ট্রিবিউন