সন্ধ্যার মধ্যে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫১:১৪,অপরাহ্ন ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
সন্ধ্যার মধ্যে হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শনিবার সকালে নগরীর কলেজিয়েট স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি এ আহ্বান জানান।
এসময় মন্ত্রী বলেন,‘মানুষ পুড়িয়ে মারা, গাড়িতে আগুন দেয়া,ককটেল-পেট্রলবোমা মারা এগুলো রাজনীতি নয়। যদি আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকত তাহলে জনগণ রাস্তায় নেমে আসত, জনগণই অবরোধ করত। হরতালে দোকানপাট বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করত। কিন্তু আন্দোলনের নামে দেশে যা চলছে তা হত্যাযজ্ঞ। এটা কোন সভ্য দেশে চলতে পারেনা।’
পরীক্ষার দিন ছাড়া অন্যদিন হরতাল দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে হরতাল না দেওয়ার জন্য অনেকবার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে জাতির বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘোষণা করেছেন। লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। পরীক্ষার দিন ছাড়া অন্যদিন হরতাল দিন। আজকের এ প্রজম্ম আগামীতে দেশ পরিবচালনা করবেন। তাদের বেড়ে উঠা যদি এখন বাধাগ্রস্থ হয় তবে তা জাতির জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবে না।’
মন্ত্রী বলেন,‘যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী তারা তো কোন দলের নয়। তাদের মধ্যে বিএনপি নেতাদের ছেলেমেয়েও আছে, জামায়াতের নেতাদের ছেলেমেয়েও আছে। তারা পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে না কি হবে। এতে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকবে। আন্দোলনের নামে তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করা হবে, এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না।
পরীক্ষার্থীদের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি রাজনীতি করেন জনগণের জন্য। আর জনগণ যদি এ রাজনীতিতে খুশি না থাকে তবে সে রাজনীতি করে লাভ নেই। আপনারও মন আছে, বিবেক আছে। পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধ করে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করুণ। পরীক্ষার্থীদের শিক্ষার পথকে রুদ্ধ করবেন না।’
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে পরীক্ষা শুরু করেছি। রাজনীতির কিছু আচার আচরণ আছে। রাজনৈতিক আচরণ ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করা দরকার। এ অবস্থায় দল,মত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। কলেজিয়েট স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনের পর শিক্ষামন্ত্রী মুসলিম হাই স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বের হয়ে আসার সময় হঠাৎ গাড়ী থেকে নেমে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রী অভিভাবকদের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনেন।
মুনমুন আক্তার নামে এক মহিলা অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, আমরা কিভাবে ছেলে মেয়েদেরকে পরীক্ষার হলে পাঠাব। হরতাল অবরোধকারীরা পেট্রল বোমা মারছে। গাড়ী জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বারবার পরীক্ষা পিছানোর কারণে প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এ অভিভাবক। তাছাড়া এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিন মুসলিম হাই স্কুলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২০ মিনিট পূর্বে খাতা নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন মুনমুন আক্তার।
শিক্ষামন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সন্তানের মত অবরোধকারীদেরও ছেলে মেয়ে আছে। কিন্তু তবুও তারা জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য হত্যাযজ্ঞে মেতেছেন। যা কোনভাবে কাম্য নয়। আপনাদের এ কথাগুলো কি বেগম জিয়ার হৃদয়ে স্পর্শ করে না। আপনারা ছেলেমেয়েদেরকে পরীক্ষার হলে নিয়ে আসেন আমরা নিরাপত্তা দিব। এ সময় মন্ত্রী মুসলিম হাই স্কুলে শুক্রবার ২০ মিনিট পূর্বে খাতা নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুলে এক অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, আমরা নিয়মিত পরীক্ষা চাই। যাতে ঠিক সময়ের মধ্যে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে। আপনারা কিভাবে সন্তানদের নিরাপত্তা দিবেন। বাসা থেকে বের হয়ে স্কুল পর্যন্ত সারা পথে কি পুলিশ দিতে পারবেন? আপনরা রাজনৈতিক সমস্যাগুলো আগে সমাধান করে নেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, সবকিছু সমাধানের একটি স্বীকৃত পথ আছে। যা বিএনপি নেত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অনুসরণ না করে ভুল পথে পা দিয়েছে। আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করুণ আমরাও আপনাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করব।
শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রী পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে একটার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। দেশে চলমান পরিস্থিতিতে কিভাবে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সে ব্যাপারে বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। এ সময় শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষাবোর্ডর চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো.শাহজাহান, চট্টগ্রাম বোর্ডের সচিব ড.পীযুষ দত্ত, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান উপস্থিত ছিলেন।