সচিনকে ‘মিথ্যেবাদী’ বললেন চ্যাপেল
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১৫:৪৯,অপরাহ্ন ০৪ নভেম্বর ২০১৪
স্পোর্টস ডেস্ক: সচিনের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন গ্রেগ চ্যাপেল। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপের আগে রাহুল দ্রাবিড়কে সরিয়ে সচিনকে অধিনায়ক্ত্বের প্রস্তাব দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন প্রাক্তন এই ভারতীয় ক্রিকেট কোচ।
নিজের আত্মজীবনী ”প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে”-তে অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট গ্রেট তথা প্রাক্তন ভারতীয় কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের বিরুদ্ধে রীতিমত বোমা ফাটিয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার। আনুষ্ঠানিক প্রকাশের আগেই এই আত্মজীবনী কিছু অংশ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই হইচই পড়ে গেছে ক্রিকেট বিশ্ব। চ্যাপেলকে শুধুমাত্র ‘রিং মাস্টার’ বলেই ক্ষান্ত হননি তিনি, জানিয়েছেন ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে তাঁর বাড়ি বয়ে এসে চ্যাপেল দ্রাবিড়কে সরিয়ে তাঁকে অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেন। শুধু তাই নয় একসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাবও নাকি দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারতীয় কোচ।
গতকাল সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর আজ চ্যাপেল জানিয়েছেন সচিন নাকি সম্পূর্ণ অসত্য লিখেছেন।
”আমি কোনও বাকযুদ্ধে যেতে চাই না। পরিস্কারভাবে শুধু এটুকুই জানাতে চাই ভারতীয় কোচ হিসাবে আমি কোন দিনও রাহুলকে সরিয়ে সচিনকে অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব দিইনি।” মন্তব্য চ্যাপেলের।
চ্যাপেল জানিয়েছেন সচিনের মন্তব্যে তিনি ভীষণ অবাক হয়েছেন। সচিনের বাড়ি যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও চ্যাপেল দাবি করেছেন সচিন যে সময়ের কথা লিখেছেন তার অন্তত ১ বছর আগে তিনি মাস্টারব্লাস্টারকে দেখতে গিয়েছিলেন। সৌজন্যপূর্ণ সেই সাক্ষাতে একবারও রাহুলকে সরানোর প্রসঙ্গ ওঠেনি বলে দাবি চ্যাপেলের।
আত্মজীবনীতে অস্ট্রেলিয়ান চ্যাপেলের তীব্র সমালোচনা করেছেন সচিন। চ্যাপেলকে “রিং মাস্টার’ আখ্যা দিয়ে সচিন জানিয়েছেন ”চ্যাপেল সব সময় নিজের ভাবনা ক্রিকেটারদের উপর চাপিয়ে দিতেন চ্যাপেল। খেলোয়াড়দের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি ছিল না তাঁর। কোনও দিন ভাবারও চেষ্টা করেননি তাঁর সিদ্ধান্তে খেলোয়াড়রা আদৌ স্বাচ্ছন্দ্য কিনা।”
সচিনের বাড়িতে চ্যাপেল অধিনায়ক্ত্বের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ায় মাস্টারব্লাস্টারের সঙ্গেই চমকে উঠেছিলেন তাঁর স্ত্রী অঞ্জলিও।
সচিন লিখেছেন ক্রিকেটের সবথেকে বড় টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার মাত্র এক মাস আগে চোখের সামনে এমন এক কোচকে দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন, যাঁর নিজের দলেরই ক্যাপ্টেনের প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মানবোধ নেই।
সচিন তাঁর প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ খারিজ করে দেওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সচিনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন চ্যাপেল।
এই ঘটনায় মাস্টারব্লাস্টার এতটাই বিরক্ত হয়ে ছিলেন যে ২০০৭-এর বিশ্বকাপের আগে বিসিসিআই-কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন চ্যাপেলকে ভারতে রেখেই দলকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাঠানোর। সিনিয়র প্লেয়াররাই দলের দায়িত্ব নিয়ে দলের একতা বজায় রাখতে পারবেন বলেও বোর্ডকে জানিয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে, না চাইতেও যিনি এই বিতর্কের অন্যতম অংশ সেই রাহুল দ্রাবিড় মন্তব্য করেছেন ” আমি এখনও পর্যন্ত বইটার উদ্ধৃতাংশ পড়িনি। দু’জন ব্যক্তির ব্যক্তিগত আলোচনার অংশীদার হতে চাই না। এর আগে এই নিয়ে কিছুই শুনিনি। কী হয়েছিল সেই বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র কোনও ধারণা নেই। তাই কোনও মন্তব্যই করতে চাই না।”
সাত বছর আগের ঘটনায় এখন তার আর কিছুই এসে যায় না বলে জানিয়েছেন দ্রাবিড়।
”প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে”-তে সচিন বলেছেন চ্যাপেলের উদ্দেশ্য ছিল দল থেকে সিনিয়র প্লেয়ারদের সরিয়ে ফেলা। চ্যাপেলের বিরুদ্ধে দলের একতা ভঙ্গের অভিযোগও এনেছেন সচিন। ইচ্ছাকৃত ভাবে সমস্যায় ফেলার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মণকে মিডল অর্ডার থেকে সরিয়ে ওপেনিং করতে বলেছিলেন চ্যাপেল। আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন সচিন।
অন্যদিকে, এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। সচিনের চ্যাপেল বিরোধী সবকটি অভিযোগ সত্যি বলে দাবি করেছেন তিনি।
”আমি সত্যিই আর ওই সময়ে ফিরে যেতে চাই না। সবাই তার ফলাফল দেখেছে। ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে অন্যতম এই সময়। আমার মত কারোর জীবনের সব থেকে খারাপ অধ্যায় ছিল ওই সময়টা। মিথ্যের পর মিথ্যে বলেছে লোকটা। ছ’মাসের মধ্যে রাহুলকে সরিয়ে সচিনকে ক্যাপ্টেন করতে চেয়ে ছিলেন উনি।” মন্তব্য সৌরভের।
”২০০৭ সালে বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগ থেকেই ভারতের বিদায়ে আমি বিন্দুমাত্র অবাক হইনি। দলে ফিরে আসার বেশ কিছুদিন বাদে আমি রাহুলের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম দেখ কীসব চলছে। রাহুল বলেছিল সব কিছু বুঝলেও চ্যাপেলকে কন্ট্রোল করা ওর সাধ্যাতীত।” জানিয়েছেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক।
সচিনের সমর্থনে মুখ খুলেছেন হরভজন সিংও। জানিয়েছেন দলে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি” চালু করেছিলেন চ্যাপেল।
সুত্র: জিনিউজ