শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষাসৈনিক মতিনকে বিদায়, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়নি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৯:১৫,অপরাহ্ন ০৯ অক্টোবর ২০১৪
: হাজারো মানুষ। হাতে ফুল। হৃদয়ে গভীর বিষাদ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমন আবেগঘন পরিবেশে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সবাই চিরবিদায় জানিয়েছেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনকে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান রূপকার ভাষা-মতিনের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। আয়োজনে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। শ্রদ্ধা নিবেদনের এই পর্বে সহযোগিতা করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
আবদুল মতিনের মরদেহে প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএসএমএমইউ। এরপর আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিককর্মীসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে আবদুল মতিনের স্ত্রী গুলবদননেছা ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভাষাসৈনিকের মরদেহ হস্তান্তর করেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ভাষা-অন্তঃপ্রাণ এই সংগ্রামী মানুষটির আদর্শ অনুসরণের জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান গুলবদননেছা।
এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে বেলা দুইটার দিকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব শেষ হয়। এরপর ভাষা-মতিনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল বুধবার বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহাপ্রয়াণে যান ৮৮ বছর বয়সী আবদুল মতিন।
পরিবার ও চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল নয়টায় চিকিৎসকেরা ভাষা-মতিনের কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার যন্ত্র খুলে নেন। এ সময় স্ত্রী গুলবদননেছা তাঁর পাশে ছিলেন।
৪ অক্টোবর থেকে ভাষা-মতিনকে কৃত্রিম শ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছিল। গত ১৮ আগস্ট মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে প্রথমে মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাঁকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। গত ২০ আগস্ট মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে রক্ত অপসারণ করা হলেও তাঁর অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। গত বৃহস্পতিবার থেকে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়াশুরু হয়।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন সন্ধানীকে মরণোত্তর চক্ষু ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য দেহ দান করে গেছেন। সে অনুযায়ী মৃত্যুর পরপরই সন্ধানীতে তাঁর কর্নিয়া দানের কাজ সম্পন্ন করা হয়। কর্নিয়া সংগ্রহের পর তাঁর মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে আজ দুপুরে তাঁর মরদেহ ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলা হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়।
১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে জন্ম নেন আবদুল মতিন। তাঁর বাবা আবদুল জলিল ও মা আমেনা খাতুন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল অবধি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য আবদুল মতিন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক আবদুল মতিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের অভাবে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আবদুল মতিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ভাষা সৈনিক হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যদা পাননি এর উত্তরে নাসিম বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের অভাব ছিল। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া না হলেও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হয়েছে। নাসিম বলেন, ভাষা সৈনিক মতিন রাষ্ট্রের সম্পদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনে মতিনের অবদান রাষ্ট্র ও জনগণ ভুলবে না। তিনি আরও বলেন, সরকার ভাষা মতিনের জন্য সব করেছে। কোনো অভিযোগ সত্য নয়।
ওদিকে, আবদুল মতিনকে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শহীদ মিনারে আবদুল মতিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এ ধরনের ব্যক্তিদের মৃত্যুতে সবসময় রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া হয়েছে। সরকার কেন আবদুল মতিনকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়নি তা বোধগম্য নয়। এ সময় সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, হাবীন-উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।