শেষ খেলাটি খেলবেন এরশাদ : রনি
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৫:২৪,অপরাহ্ন ১৮ নভেম্বর ২০১৩
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ শেষ খেলাটি খেলবেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সুদীর্ঘ স্টাটাসে রনি বলেন, “আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে- এবারও শেষ খেলাটি খেলবেন জনাব হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। ঠিক যেমনটি খেলেছিলেন গত বিএনপি সরকার আমলের শেষ দিকে কিংবা ১৯৯৬ সালের আওযামী লীগ সরকারের শেষ সময়।”
তিনি বলেন, “জনাব এরশাদকে নিয়ে এই মুহুর্তে পুরো দেশ আতংকিত। আতংকিত আমি নিজেও। সম্ভবত তার সাবেক স্ত্রী বিদিশাও কম আতংকিত নন। আমি আবার এসব খবর জানি অন্য মাধ্যমে। সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পারিবারিক ভাবেই আমার দীর্ঘদিনের ভালো সম্পর্ক। তার দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দও আমাকে ভালো জানেন। ফলে আমি জনাব এরশাদের বাইরের খবরা খবর পেয়ে থাকি নিয়মিত ভাবে। অন্যদিকে ভেতরের খবর পাই তার কয়েক বান্ধবীর মাধ্যমে। বিদিশার মাধ্যমেও কিছু খবর পেয়েছিলাম। বিদিশার সঙ্গে আমার সরাসরি পরিচয় বা বন্ধুত্ব না থাকলেও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ডা: ফারহানার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ও ঘনিষ্টতা রয়েছে।”
টাকা পয়সার ব্যাপারে এরশাদ খুবই হিসাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি জানি জনাব এরশাদ টাকা পয়সার ব্যাপারে খুবই হিসেবী। আর বিদিশার অভিযোগ তিনি ভীষণ রকম হাড় কিপটে। বিয়ের আগে নানা রকম পুটু পুটু কথা কিন্তু বিয়ের পর সব কিছু উল্টো- সব কিছুতেই কেবল হিসেব আর হিসেব। মেয়েদের সঙ্গে তার দহরম মহরম নিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন- আমি কোন মেয়ের কাছে যাই না। মেয়েরাই আমার নিকট আসে। মূলত: আমার চেহারা আর অভিব্যক্তির মধ্যেই এক ধরনের প্রেমিক প্রেমিক ভাব আছে। জনাব এরশাদের এই কথার সঙ্গে আমি সহতম পোষণ করি। গত পাঁচ বছরে তাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। তার ব্যক্তিত্ব, চাহনী আর কথা বলার ভঙ্গিমার সঙ্গে মানুষকে আপ্যায়ন করার এক অসাধারণ মোহময় ক্ষমতা রয়েছে তার ভেতরে। ফলে কেবল নারী নয়-পুরুষরাও বার বার তার নিকট ফিরে যেতে চায় আঘাত পাবার পরও।”
এরশাদ তার কথা রাখেন উল্লেখ করে রনি বলেন, “জনাব এরশাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো- তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন না। তার সাবেক এক মহাসচিব বলেন- বিশেষত মেয়েদের সঙ্গে তিনি একেবারেই কথা রাখেন না। এ নিয়ে আমি নিজেও বিভ্রান্ত ছিলাম। কিন্তু বিখ্যাত কয়েক জন দার্শনিকের লেখা পড়ে আমিতো রীতিমতো অবাক। তারা লিখেছেন কথা দিয়ে কথা না রাখাটা ক্ষেত্র বিশেষে একধরনের ভাল মানুষীর লক্ষণ। অতি মহৎ লোকেরা না কি হরহামেশা এই কাজটি করে থাকে! সেটা আবার কেমন? তার ব্যাখাটাও দার্শনিকেরা দিয়েছেন। তাদের মতে, মহান ব্যক্তিগণ কাউকে ভদ্রতা বশতঃ না বলে তাদের মনে কষ্ট দিতে চান না। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত লোকজন সেই সব দাবী নিয়ে তার কাছে আসে যা পুরুণ করা সম্ভব নয়। ফলে তিনি মুছকী হাসেন, মাথা নেড়ে সম্মতি জানান আবার কখনো কখনো মৌখিক আশ্বাসও প্রদান করেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে এগুলো পালন করা কখনোই সম্ভব হয় না।”
তিনি আরো বলেন, “দার্শনিকগণ একথাও বলেন যে, “মহান ব্যক্তিরা আগবাড়িয়ে কোন প্রতিশ্রুতি দেন না। লোকজন তাদের নিকট গিয়ে জোর করে প্রতিশ্রুতি আদায় করে। এর বাইরে ভিন্ন চিত্রও আছে। কোন কোন লোক আগবাড়িয়ে এবং বিনা প্রয়োজনে এগিয়ে গিয়ে নানা রকম অপ্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এদেরকেই বলা হয় প্রতারক বা মানুষরুপী শয়তান। আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসলে কেমন মানুষ তা উপরে আল্লাহ এবং নীচে বেগম রওশন এরশাদই ভালো বলতে পারবেন। যদি জনাব এরশাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা সুদুর প্রসারী চিন্তার কথা ভাবি তবে তাকে আমার অত্যন্ত যোগ্য লোক বলেই মনে হয়। কারন রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ এবং আজ অবধি তিনি যে সিন্ধান্ত নিয়েছেন তার সবগুলোই ছিলো সঠিক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ জোট থেকে বের হওয়ার চেষ্টা, বিএনপি আমলে নিরাপদ থাকা এবং ১/১১ এর সময় সবচেয়ে সুন্দরতম কৌশলগত অবস্থানে থাকার ব্যাপারে যে যতো সমালোচনাই করুক না কেন- এ গুলো সবই ছিলো তার নিজের জন্য, কিংবা পরিবারের জন্য এবং সর্বপরি দলের জন্য সর্বোত্তম কল্যাণকর।”
বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রনি বলেন, “সমালোচকদের কথা যে শুনতে হয় কিন্তু পালন করতে হয় না তা তিনি খুব ভালোভাবে উপলব্দি করেছেন। এই নিয়ে তার অবশ্য মাথা ব্যাথাও নেই। গত ৫০ বছরের বিশ্বের রাজনীতিতে এমনিতেই তিনি মাইল ফলক স্থাপন করেছেন। তিনিই একমাত্র সামরিক শাসক যিনি উৎখাৎ হবার পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় টিকে আছেন বেশ দাপটের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশকে খুব ভালোভাবে চিনেন এবং বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক মহলকেও ভালো করে জানেন। ফলে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা বা তার জ্ঞান বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করা নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু না।”
”এরশাদ সাহেবের নির্বুদ্ধিতা নিয়ে ছোট্ট একটি উপহাস মনে পড়লো। বিদিশা একবার ঠিক বিয়ের কিছুদিন পর, আমার এক বান্ধবীকে বললো- আরে জানিস! ও না- কি যে বোকা! একদম কিছু বুঝে না। আমর বান্ধবী উত্তর করলো না- সাবধান তুই আর এই কথা ভুলেও উচ্চারণ করবি না। তোর কাছে নিজেকে বোকা হিসেবে উপস্থাপন করে তোকে যে সে কনভিনসও করতে পেরেছে এটাই তার বড় সফলতা এবং স্বার্থকতা।”
”এরশাদের শাসনামলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়তাম এবং পার্ট টাইম সাংবাদিকতা করতাম। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজপথের প্রতিটি আন্দোলনে ছিলাম। আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারা রাতের আধারে এরশাদ সাহেবের আনুকূল্য লাভের ব্যাপারে কি করতো তাও আমি জানতাম। এমনকি সেই সময় অনেক শীর্ষ নেতারাও এরশাদের নিকট থেকে হাত পেতে টাকা নিতেন। আমি অবাক হয়ে ভাবি এরশাদের রাজনৈতিক সংযমবোধ- সম্পর্কে। অনেক লোক তাকে গালি দেয় আবার অনেকে তার সামনে বড় বড় নীতিকথা বলে। অথচ তিনি যদি একবার মুখ খোলেন সে ক্ষেত্রে অনেকের পরনের কাপড় থাকবে না।”
”এতো কথা বলার অর্থ হলো- হাল আমলে এরশাদের সকাল বিকেল ভিন্ন ভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতি দেয়া নিয়ে জনগণের বিরুপ মন্তব্য বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের নানামুখী সমীকরণমূলক ব্যাখা সম্পর্কে আমার অনুভূতি জানানো। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে- এবারও শেষ খেলাটি খেলবেন জনাব হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। ঠিক যেমনটি খেলেছিলেন গত বিএনপি সরকার আমলের শেষ দিকে কিংবা ১৯৯৬ সালের আওযামী লীগ সরকারের শেষ সময়।”
”এরশাদ সাহেবের সবচেয়ে বড় বাধা হলো তার বয়স এবং মাথার উপর ঝোলা মামলা মোকদ্দমাগুলো। বিদিশার সঙ্গে ঘর ভেঙ্গে যাবার পর তিনি নিঃসঙ্গতায় ভূগছেন। দেহ অকার্যকর হলেও তার মনের তারুণ্যে একটুও ভাটা পড়েনি। ফলে এখনো অনেক সুন্দরী ললনা তাকে প্রতিনিয়ত টেলিফোনে জ্বালাতন করে। এর জন্য তাকে দিনরাতের একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়। অন্যদিকে বৃদ্ধ বযসের শরীরের নানা জটিলতা এড়িয়ে চলার জন্য ব্যায়াম, খাদ্যাভাসসহ নানা জিনিস করতে করতে সময় চলে যায়। রাজনীতির জন্য নির্ধারিত সময়টি নিয়ে তাই তেমন গবেষণা করার সময় পান না। তারপরও কম কিসে। আওয়ামী লীগের মতো একটি পরিপক্ক দলকে তিনি সকালে হাইকোর্ট দেখান তো আবার বিকেলবেলা উপজেলা কোর্টে নিয়ে যান। ডা: বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ মাহামুদুর রহমান মান্না সাহেবরাও তার হাওতার বাইরে নয়।”
”অন্যদিকে, বিএনপির লোকজন একবার সিংগাপুর. আবার সৌদি আরব যায় কেবল তার সঙ্গে দুদন্ড নিরিবিলিতে কথা বলার জন্য। এই অবস্থায় তিনি অবশ্যই শেষ খেলাটি খেলবেন- যখন দেখবেন গোলটি নিশ্চিত তার পক্ষেই যাচ্ছে। গোল দেয়ার পূর্বেকার উত্তেজনাকর মুহুর্তগুলো তিনি কাজে লাগাচ্ছেন বেশ হেলেদুলে এবং রংঢং করে। এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কি আছে। এটা তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্টাইল। ১৯৮২ সালে ক্ষমতা লাভের পর আজ অবধি তিনিতো একবারও তার স্টাইল পরিবর্তন করেননি। তিনি যেমন ছিলেন ঠিক তেমনটি আছেন এখনো। তিনি একবারো কারো নিকট করুনার জন্য যাননি। আমরা সবাই তার নিকট যাচ্ছি। কে না গিয়েছে বা কে না যাচ্ছে? দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এমনকি দেশী বিদেশী সিনেমার নায়ক নায়িকা পর্যন্ত সকলেই তার সঙ্গ লাভের জন্য ছুটেছিলো এবং এখনো ছুটছে। তিনিতো উপযাচক হয়ে কারো দ্বারে ধরণা দেননি। তবে তাকে কেনো বিশ্ব বিহায়া বলা হবে?”
”আমার মনে হচ্ছে সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সরকারে থেকে সকল সুবিধা আদায় করে নেবেন। এজন্য তাকে কিন্তু কোন কাঠ খড় পোড়াতে হবে না। তার কৌশলের ফাঁদে পরে সরকারই সব কিছু তার কদম মোবারকে সমর্পন করবে। অন্যদিকে বিরোধী দলের নিকট নিজেকে উপযোগী করে তোলার সকল বিদ্যাই তার নখদর্পনে। তারপর হঠাৎ একদিন দেখবেন– তিনি দুনেত্রীর যে কোন একজনের পাশে বসে আছেন বিশাল কোন জনসভায়। হয়তো পল্টন ময়দানে নয়তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। হয়তো সেই দিনই বুঝতে পারবো কোন দল ক্ষমতায় আসছে।”
”এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। তিনি চলে যেতে পারেন সিংগাপুর বা সৌদি আরব। তিনি ফিরে আসবেন এক নবরুপে, মূখে নতুন ভাষা, নতুন হাসি আর বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তখন অনেকেই পালাচ্ছে। কেবল ফিরে এসেছেন জনাব হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ।”