শিক্ষার সাথে অটোরিকশা চালক তজম্মুলের যুদ্ধ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৩:১৩,অপরাহ্ন ০৪ নভেম্বর ২০১৪
মোহাম্মদ আলী শিপন, বিশ্বনাথ: অভাব অটনের পরিবার। নুন আনতে পান্তা পুরায়। কোন মতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে সাত সদস্যের একটি পরিবার। এত বড় একটি পরিবার চালানো যে কারো পক্ষেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এমতাবস্থায় সন্তান একটু বড় হয়ে প্রাইমারীর চৌকাঠ পেরুলেই তাকে রোজগারে ঢুকিয়ে দেয়াটা স্বাভাবিক যাতে কর্তার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার গুরুত্ব কে অনুধাবন করে আজোও চার ছেলে এবং এক মেয়ে’র পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন অটোরিকশা চালক তজম্মুল আলী (৪৮)। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার বিশ্বনাথ ইউনিয়নের পূর্ব কারিকোনা গ্রামের বাসিন্দা। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না,বিকশিত হতে পারে না মানবিকতা,গড়ে ওঠে না সুকুমার বৃত্তি। এই ধ্যান-ধারণায় উদ্বুদ্ব হয়ে অটোরিকশা চালক তজম্মুল আলী তার চার ছেলে ও এক মেয়ে কে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন। তজম্মুল আলী অর্থাভাবে নিজে তেমন লেখা-পড়া করতে না পারলেও ছেলেদের ও মেয়েকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তিনি আপোষহীন। তার সন্তানরাও খুব মেধাবী। কেবল অটোরিকশা চালিয়ে যেখানে সাত সদস্যের একটি পরিবারের খাদ্য সংস্থান করাই দুরুহ,সেখানে সন্তানদের লেখা-পড়ার রাহা-খরচ যোগাতে তাকে পুহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ,স্বীকার করে নিতে হচ্ছে সীমাহীন যন্ত্রনা। সম্প্রতি তার বড় ছেলে কাওছার আহমদ ঢাকার ছলিম উল্লা মেডিকেল কলেজে অধ্যায়নের সুযোগ পেয়েছেন। অন্য দুই ছেলে মামুন আহমদ ও আফছর আহমদ সিলেট নগরীরর ইউনির্ভাশাল কলেজে পড়া শুনা করেছেন। আরেক ছেলে আরিফুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে তাহমিনা বেগম স্থানীয় ওমর ফারুক একাডেমী ও উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃতিত্বের সাথে লেখা-পড়া করছে। তজম্মুল আলীর স্ত্রী একজন গৃহিনী।
অনুসন্ধানে জানাযায়, তজম্মুল আলী বেশ কিছু দুই দফায় মধ্যপ্রাচ্য দেশে অবস্থান করেন। বিগত প্রায় ৬ বছর পূর্বে দেশে চলে আসনে। দেশে এসে প্রথমে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা গাড়ি ভাড়া নিয়ে জীবিকা তাগিতে রাস্তায় নেমে পড়েন। গত দুই পূর্বে তজম্মুল আলী প্রাইম ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটি অটোরিকশা গাড়ি ক্রয় করেন। বর্তমানে ওই অটোরিকশা গাড়ির টাকা দিয়ে উপার্জন করে সাত সদস্যের পরিবার কোন মতে চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ছেলে এবং মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মাঝে মাঝে মধ্যে আত্বীয়-স্বজনরা তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। তার তিন ছেলে কাওছার আহমদ,মামুন আহমদ ও আফছর আহমদ পৃথকভাবে এস এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে গোল্ডেন এ+ পায়। সিলেট শহর থেকে এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে তার বড় ছেলে কাওছার আহমদ গোল্ডেন এ+ লাভ করে।
এলাকাবাসি জানান, অটোরিকশা গাড়ি নিয়ে ভোর বেলায় গাড়ি নিয়ে বের হতে দেখা যায় তজম্মুল আলীকে। সে অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়া টাকা উর্পাজন করছে। তার ছেলেরা অনেক ভদ্র-মেধাবী। একদিন তার ছেলেরা এলাকার সুনাম বয়ে আনবেন এমটাই মনে করছেন এলাকাবাসি।
তজম্মুল আলীর বড় ছেলে মেধাবী ছাত্র কাওছার আহমদ বলেন, পিতার কষ্টের টাকায় আমরা লেখা-পড়া করে আসছি। উপজেলা তথা দেশবাসির কাছে তিনি দোয়া কামনা করেন।
তজম্মুল আলী বলেন, অটোরিশকা চালিয়ে সাত সদস্য পরিবার নিয়ে কোন মতো চলছে সংসার। অনেক কষ্টে করে ছেলে-মেয়েকে লেখা পড়া করাচ্ছি। তবে অনেক আত্বীয় স্বজন মাঝে মাঝে সহযোগিতা করে আসছেন।
এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, তজম্মুল আলী আমাদের গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কষ্ট করে অটোরিশকা চালিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়া খরচ যোগাচ্ছেন। তার ছেলে-মেয়ে শিক্ষিত হয়ে এলাকার সুনাম ভয়ে আনবে এমটাই তিনি মনে করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আসাদুল হক অটোরিকশা চালক তজম্মুল আলীর পাশে এলাকার প্রবাসি ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।