শিক্ষকের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২০:০২,অপরাহ্ন ১৯ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: বাগেরহাটের শরণখোলার আমড়াগাছিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে সড়ক অবরোধ, ঝাঁড়ু মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। এসময় অভিভাবকসহ শত শত সচেতন মানুষ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহফুজুর রহমান প্রিন্সের বহিষ্কার দাবি করেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ ও স্কুল পরিচালনা কমিটি জরুরি সভা কে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে দুপরে শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী তুলে নেয়। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
শরণখোলা আমড়াগাছিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স সোমবার দুপুরে এক কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হন। খবর পেয়ে শরণখোলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষক প্রিন্সকে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে ওই ছাত্রীসহ থানায় নিয়ে আসে। এঘটনায় মেয়ে পক্ষের কোনো অভিযোগ না থাকায় পরে প্রিন্সকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়।
তাদের দাবি চরিত্রহীন কোনো ব্যক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে থাকতে পারেনা। এ কারণে ঘটনার পরের দিন সকাল থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সবাই। ওই শিক্ষকের বহিষ্কারসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানায় তারা। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এর আগে ওই শিক্ষককে আরো দুইবার বহিষ্কার করা হয় বলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সদস্যরা জানায়।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার, হাবিবা আক্তর, অর্পিতা রাণী, সোলায়ান হোসেন, সপ্তম শ্রেণির মুন আক্তার, সাদিয়া আক্তার, সাব্বির ফরাজীসহ ছাত্রছাত্রীরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স একজন চরিত্রহীন শিক্ষক। তার কাছে কেউ নিরাপদ নয়। তার মতো শিক্ষক থাকলে বিদ্যালযের পরিবেশ নষ্ট হবে। তার এমন কর্মাকাণ্ডের বিচার ও স্থায়ী বহিষ্কারে দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ ঝাঁড়ু হাতে নিয়ে আমড়াগাছিয়া বাজারের সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে ওই শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক সুরাইয়া পারভিন, রুহুল আমীন মাসুদ, সীমা বেগম, নজরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, শিক্ষক প্রিন্সের স্ত্রী-সন্তান থাকতেও এভাবে একের পর এক অঘন ঘটিয়ে পার পেয়ে সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকদের চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। তার মতো চরিত্রহীন শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে থাকলে আমাদের মেয়েদের অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে যাবো। আমরা তার বিচার দাবি করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো, সরোয়ার হোসেন খান বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবির মুখে দুপুরে স্কুল পরিচালনা কমিটির জরুরি সভায় অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে গঠন করা হয়েছে। দন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. সহিদ হোসেন বাবুল বলেন, মাহফুজুর রহমান প্রিন্সকে একই অভিযোগে এর আগে আরো দুইবার বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু, পরবর্তীতে অভিযোগকারীরা তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করায় সে আবার পুনর্বহাল হয়। তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অভিযোগকারী না পাওয়া সে বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে। এবার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আন্দোলকারীদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচী প্রত্যাহার করে। সোমবার দুপুরে শিক্ষককে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ ছাত্রীসহ তাকে উদ্ধার করা হয়। কেউ অভিযোগ না করায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ শতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স জানান, কিছুদিন আগে ওই ছাত্রীকে রেজিস্ট্রি করে নয়, কালিমা পড়ে আমি বিয়ে করেছি। ওই দিন আমি দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন। এসময় শত্রু পক্ষ তাদের উপর অহেতুক হামলা চালিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কোন অভিযোগ না পেয়ে পুলিশ আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। একের পর এক নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে তার নাম উঠছে কে ? সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দেননি।