শাহবাজপুরে ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা : বসত বাড়ি ও দোকানে আগুন
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:০৩:১০,অপরাহ্ন ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬
সাদিক তাজিন: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম আবুল হোসেন ওরফে আলম মেম্বার (৩৫)। পূর্ববিরোধের জের ধরে কাজল মিয়া নামের এক ব্যক্তি গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহত আবুল হোসেন উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি উত্তর শাহবাজপুরের সায়পুর গ্রামে। হত্যার ঘটনায় আবুল হোসেনের সমর্থকেরা কাজল মিয়ার দোকানে, বাড়িতে এবং কাজলের ইন্দনদাতা সন্দেহে জুনেদ আহমদ নামের এক ব্যক্তির দোকানে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সূত্রে জানা গেছে, নিহত আবুল হোসেন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর শাহবাজপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুক আহমদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে স্থানীয় আলিমপুর গ্রামে এক ব্যক্তির জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। পথে সায়পুর গ্রামের কাজল মিয়া পথরোধ করে তাঁদের মোটরসাইকেলটি আটকিয়ে ধারালো দা দিয়ে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা আবুল হোসেনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। একপর্যায়ে আবুল হোসেন মোটরসাইকেল থেকে মাটিতে পড়ে গেলে কাজল দৌড়ে পালিয়ে যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পার্শ্ববর্তী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ইউপি সদস্যের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর সমর্থকেরা দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সায়পুর গ্রামে কাজলের মুদি দোকান ও বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। পরে দোকানসহ বাড়ির টিনশেডের একটি আধা পাকা ও একটি কাঁচা ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন বেলা একটার দিকে বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে নিহত আলমের উত্তেজিত সমর্থকেরা শাহবাজপুরের মসজিদ মার্কেটস্থ ‘হাবিবা টেডার্স’ নামের আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্টানে আগুন দেয়। জানা যায়, দোকান মালিক জুনেদ আহমদের সাথে নিহত আলমের পারিবারিক পূর্বশত্রুতা ছিল। উল্লেখ্য ২০১৫ সালে নিহত আলমের বোন ফরিদা আক্তার জুনেদের সাথে প্রেমঘটিত কারনে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই জেরে আলম হত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে জুনেদের দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রওশনুজ্জামান, বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বড়লেখার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ইউপি সদস্য মাসুক আহমদ আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, আবুল হোসেন ও তিনি জানাজায় যাচ্ছিলেন। কাজলের দোকানের সামনে পৌঁছার পরপরই হঠাৎ করে তিনি দা নিয়ে এসে মোটরসাইকেল আটকান এবং আবুল হোসেনকে কোপাতে থাকেন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, পূর্ববিরোধের জের ধরে সাত-আট দিন আগে কাজলকে স্থানীয় শাহবাজপুর বাজারে নিয়ে নিহত ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের আত্মীয়স্বজন মারধর করেছিলেন।
বড়লেখা থানার ওসি সহিদুর রহমান আজ বিকেল চারটার দিকে বলেন, পূর্ববিরোধের জের ধরে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহত ইউপি সদস্যের মরদেহ মৌলভীবাজারের ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোনো পক্ষ এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সে জন্য এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।