শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত সুনামগেঞ্জর নীলকণ্ঠ : স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী (ফলোআপ)
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৪:১৭,অপরাহ্ন ২৮ মে ২০১৫
বিশ্বম্ভরপুর সংবাদদাতা::
নীলকণ্ঠ হাজং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যান গত ১৮ মে। এর তিনদিন আগে বাড়িতে এসে মা-বাবার আশীর্বাদ নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছে আবার ফোন করেন বাড়িতে। বাবাকে জানান নিরাপদে পৌঁছার খবর। এরপর তাঁর ছোট ভাই নীলকণ্ঠ হাজং এর স্ত্রী সঞ্চিতা হাজংকে তাঁর বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের কাইতকোনা গ্রামে বেড়াতে নিয়ে আসেন। সঞ্চিতা হাজং সেখানে থাকা অবস্থায়ই ঢাকার সেনা সদর দফতর থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে একটি ফোন পান। সেই সঙ্গে চরম দুঃসংবাদটিও। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা স্বামী সেনা সদস্য নীলকন্ঠ হাজং বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
স্বামীর নিহতের খবর শোনার পর থেকেই বাকরুদ্ধ ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা সঞ্চিতা হাজং (২৫)। নাওয়া-খাওয়া নেই। বিছানায় পড়ে আছেন। চোখ খুললেই স্বামীর জন্য আহাজারি করছেন। পরক্ষণেই আবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সঞ্চিতার মা, ভাই-বোন, প্রতিবেশীরা যেন তাঁকে একটু স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। সবাই শোকে কাতর। একই সঙ্গে খবর যায় নীলকণ্ঠ হাজংয়ের বাড়িতেও। কিন্তু তাঁর মাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছেলের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়নি। বলা হয়েছে ছেলে অসুস্থ।
এই খবরেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নীলকণ্ঠ হাজংয়ের মা অবন্তি হাজং। ছেলের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেছেন তিনি। নীলকণ্ঠ হাজংয়ের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার গিলাগরা গ্রামে। আর সঞ্চিতা দেবী হাজংয়ের বাবার বাড়ি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাইতকোনা গ্রামে। তাঁদের বিয়ে হয় ২০১৩ সালে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে সেনাবাহিনীর সদরদফতর থেকে একটি ফোন পান সঞ্চিতা দেবী। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বামীর চির বিদায়ের খবরটি। সেই থেকে তিনি বাকরুদ্ধ। কারো সঙ্গেই কোনো কথা বলছেন না তিনি। নীল কণ্ঠ হাজংয়ের মামা ধরমপাশা উপজেলার ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশুতোষ হাজং জানান, ২০০৩ সালে সেনাবাহিনিতে সৈনিক হিসাবে যোগ দেন নীলকণ্ঠ। তারা চার ভাই ও এক বোন। সকালে তাঁর বাবা রিজেন্দ্র হাজংকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। কিন্তু মা অসুস্থ থাকায় তাঁকে বলা হয়েছে, নীলকণ্ঠ হঠাত সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই খবরেই তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিকেলে তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়।
রিজেন্দ্র হাজং জানান, চারদিন আগে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। আর কোনো কথা হয়নি। সঞ্চিতার মা মনোরমা হাজং জানান, কিভাবে কি হইছে আমরা কিচ্ছু জানিনা। খবর পাওয়ার পর থেকে মেয়েটা কারো সাথে কোনো কথা কয় না। যেন পাথর হয়ে আছে। এদিকে খবর পেয়ে সঞ্চিতার বড়ভাই সঞ্জয় হাজং সিলেট থেকে বাড়িতে ছুটে আসেন। সিলেট এমসি কলেজে পড়েন তিনি। সঞ্জয় হাজং জানান, পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে সঞ্চিতা চতুর্থ। বাবা স্বপন কুমার হাজং বেঁচে নেই। খবর পাওয়ার পর থেকে কারোর সঙ্গেই কোনো কথা বলছেন না সঞ্চিতা দেবী।