রেড অ্যালার্ট প্রাপ্ত কোন আসামিকেই ফিরিয়ে আনা যায়নি
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৩:৪৮,অপরাহ্ন ১৭ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
বর্তমানে ৮৩ বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি তাদের একজনকেও। মাথায় রেড অ্যালার্ট নিয়ে ঘোরা বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিক, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীরা। তাদের কেউ কেউ অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। ধারণা করা হয়, রেড অ্যালার্ট জারি থাকা ব্যক্তিদের অধিকাংশই ভারতে অবস্থান করছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তিও রয়েছে। তারপরও ভারত থেকেও কাউকে ফিরিয়ে আনা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেন গত বছরের জুনে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে চিঠি দিয়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। ভারতও তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের নিশ্চয়তা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ফলাফল শূন্য। এখনও পর্যন্ত তাকে দেশে ফেরত আনা যায়নি। ইন্টারপোলের এই নোটিসে সর্বশেষ বাংলাদেশি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আবদুল জাব্বার এবং বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) প্রধান মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির পরও তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। এটা একটা কঠিন কাজ। বিশেষ করে অনেক দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই সেসব দেশ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনায় আরও জটিলতা রয়েছে বলে উঠে এসেছে ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে।
রেড অ্যালার্ট নোটিসে তালিকাভুক্তদের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার অনেক অভিযুক্তও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনির মধ্যে ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে এএম রশিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আরেক খুনি নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়। আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ভারতে আছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ও আবদুল জাব্বারের বিরুদ্ধেও রেড অ্যালার্ট রয়েছে।
মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘সাধারণত দেশের বাইরে থেকে কাউকে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়। তারা আমাদের অনুরোধ গ্রহণ করেছে। ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। তাদের কারও অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারলে তারা আমাদের জানাবে। এরপর অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক চ্যানেলের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করতে হবে। এক্ষেত্রে ইন্টারপোলের কোনও করণীয় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ইন্টারপোলের গ্রেফতারের ক্ষমতা নেই। ওয়ান্টেড ব্যক্তি যেখানে অবস্থান করছেন সেখানকার পুলিশকেই তাকে গ্রেফতার করতে হবে। ইন্টারপোলের প্রেস অফিস বলছে, যাদের ব্যাপারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয় তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোল সদর দফতর থেকে কোনও কর্মকর্তা পাঠানো হয় না। বরং ইন্টারপোলের অনেক সদস্য দেশই কাউকে সাময়িকভাবে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে এই রেড অ্যালার্টকে প্রাথমিক সংকেত হিসেবে বিবেচনা করে। তবে যারা রেড অ্যালার্ট জারির আবেদন করেছে তাদের সঙ্গে ওই দেশের দ্বিপাক্ষিক বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকাও বিবেচ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়টির দেখভাল করেন এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আদালতের মুখোমুখি করার জন্য কাউকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নানা আইনি জটিলতা আছে। বিশেষ করে তাদের যদি বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার যদি সত্যিই এটা চায় তাহলে ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সূত্র : ট্রিবিউন।