রাজস্থানী নবাব কন্যার কল্যাণে পা ফিরে পাচ্ছেন ৯০০ বাংলাদেশী
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫৯:৪৪,অপরাহ্ন ১৪ মে ২০১৫
ঢাকা:: ভারতের রাজস্থানের নবাব পরিবারের মেয়ে, বৈবাহিক সূত্রে বর্তমানে বাংলাদেশে বাস। শিল্পপতি-উদ্যোক্তা আসিফ মঈনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাদিয়া মঈন এদেশে আছেন প্রায় বিশ বছর। সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত অনেকবছর ধরে, তবে এবার তিনি যে র্কীতি করেছেন তা মনে রাখার মতো। তার কল্যাণে প্রায় নয়’শ মানুষ বিনামুল্যে কৃত্রিম পা ফিরে পেতে যাচ্ছেন।
জয়পুরের ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতির তৈরি বিখ্যাত ‘জয়পুর ফুট’এর কৃত্রিম পা দিয়ে আবারো কর্মমূখী হবার স্বপ্ন দেখছেন বিভিন্ন দূর্ঘটনায় পা হারানো ওইসব মানুষেরা।
সাদিয়া মঈন বিভিন্ন সময়ে নিভৃতে পরিচালনা করেছেন বিভিন্ন সামাজিক কাজ। বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায় কতজন অঙ্গ হারিয়েছেন, তার পরিসংখ্যান জানা নেই এই রাজকন্যা সাদিয়ার। তবে রানা প্লাজার মতো ভবন ধ্বসে বিপুল মানুষের অঙ্গহানির ঘটনা তিনি দেখেছেন গণমাধ্যমের সুবাদে।
বিকলাঙ্গ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি বাংলাদেশ অর্থপেডিক সোসাইটির কাছে প্রস্তাব দেন। অসহায় মানুষদের শরীরে জয়পুরের ‘জয়পুর ফুট’ সংযোজনে যাবতীয় ব্যয়ভার বহনেরও প্রস্তাব দেন সাদিয়া মঈন। সাইদা তাঁর চাচা নবাব পরিবারে সদস্য ও রাজস্থানের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নবাবজাদা আইমাদুদ্দিন আহমেদ খানের সহায়তায় পাঁচ শতাধিক অসহায় মানুষকে কৃত্রিম পা দেবার প্রস্তুতি নেন। এরপরে বিভিন্ন পর্যায়ে আরও চার’শ জনকে ওই সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হয়।
জয়পুরের ‘ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতি-‘বিএমভিএসএস’র ১৬ সদস্যের দল ঢাকায় আসে। ঢাকার আগারগাঁয় জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোরে ৭ মে শুরু হয় কৃত্রিম পা তৈরীর ক্যাম্প। ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মন্ত্রী জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র-নিটোরের কৃত্রিম পা সংযোজন কেন্দ্রীর ভাবে স্থায়ী ও আরো বড় পরিসরে সম্প্রসারণের কথা জানান।
ক্যাম্পের আহ্বায়ক ডাক্তার সৈয়দ সহিদুল ইসলাম বলেন, বিনামুলে কৃত্রিম পা’র জন্য আবেদন করেছেন প্রায় ষোল’শ অসহায় মানুষ। পাঁচ শতাধিক মানুষকে কৃত্রিম পা দেবার প্রস্তুতির বাইরে নতুন করে আরো এক’শ জনকে অর্ন্ত:ভুক্ত করা হয়েছে। তবে বিশেষ বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে আরো তিন’শ জনকে বিনামুল্যে কৃত্রিম পা দেবার অঙ্গীকার করেছে ‘বিএমভিএসএস’। যার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবেন সাদিয়া মঈন ও স্বামী আসিফ মঈন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি বড় ধরনের দূঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার স্মৃতিচারণ করেন। তৎকালীন জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা অর্থপেডিক সার্জন আর জে গার্স্ট তাকে যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সড়ক দূর্ঘটনায় আহতদের জন্য এই হাসপাতালের পরিসর ও সেবা সহায়তায় গন্ডি আরো বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি প্রস্তাব দেবেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ভারতের সহকারী রাষ্ট্রদূত সঞ্জিব চক্রবর্তি বলেন, এর আগে রানা প্লাজার ভবন ধ্স ঘটনায় অঙ্গ হারানোদের জন্য কিছু করার তাগিদ থাকলেও তা করা হয়নি। তবে এবার ‘জয়পুর ফুটের’ মাধ্যমে এদেশের অঙ্গহারানো মানুস গুলোকে আবারো কর্ম উদ্যোগী করতে পেরে আমি আনন্দিত।
‘বিএমভিএসএস’ মুখপত্র প্রকাশ ভান্ডারী বলেন, জয়পুর ফুট বিশ্বের সাতাশটি দেশে কৃত্রিম পা সংযোজন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অসহায় মানুষদের কৃত্রিম পা সংযোজন করতে পেরে আমরা আনন্দে অভিভুত।
এদেশে ‘কৃত্রিম পা’ তৈরীতে দক্ষতা বাড়াতে জয়পুরে নিয়ে এবং এদেশে এসেও তাদের টেকনিশিয়ানরা ট্রেনিং সহায়তা দেবেন বলেও জানান ‘বিএমভিএসএস’ কর্মকর্তারা। তারই ধারাবাহিকতায় মে মাসের শেষে বাংলাদেশে আসবেন ‘বিএমভিএসএস’র প্রতিষ্ঠাতা জয় মেহতা।