রাজনগরে শিলা বৃষ্টিতে মুছে গেল কৃষকের আশা আকাংঙ্খা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০১:১৬,অপরাহ্ন ২১ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ধানের যে অবস্থা কাটিয়া কোন লাভ নাই। এক কিয়ার (বিঘা ) ধান কাটতে খরচ ১ হাজার আর ধান মিলের ৫-৬ মন। গরুর খরের লাগি এখন ক্ষেতে যাওয়া লাগের।’ শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সুনাটিকি গ্রামের কৃষক সমজুল আলী (৪৫) এভাবেই জানালেন তার কষ্টের কথা।
গত কয়েকদিনের শিলা বৃষ্টি রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর, ফতেহপুর, পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ২৫টিরও বেশি গ্রামের কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। এতে প্রায় ৪ হাজার একর পাকা বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাজনগরের প্রান্তিক কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারের মওসুমে রাজনগর উপজেলার হাওর কাউয়াদীঘি ও মনু ব্যারেজের আওতাধীন প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকেরা। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৬ শ মেট্রিক টন চাল। প্রতি বছর মনু ব্যারেজের বিভিন্ন এলাকায় মনু নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ বছর দীর্ঘ খরার পর বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে শিলা বৃষ্টি । বিশেষ করে গত ৯ এপ্রিলের কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অপূরণীয় ক্ষতি হয় কাউয়াদীঘি হাওরের কৃষকের। ওই দিনের শিলা বৃষ্টিতে হাওর এবং ৪টি ইউনিয়নের ২৫টিরও বেশি গ্রামের ৪ হাজার একর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান পুরোপুরি ও আংশিক ক্ষতি হয়। এসব জমির পাকা ধান শিলা বৃষ্টিতে ঝড়ে পড়েছে।
কাউয়াদীঘি হাওর ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমিতে ধানের শীষ আছে তবে এতে একটি ধানও নেই। আবার কোথাও আংশিক ধান আছে। আর যে জমির ধান এখনো পাকার বাকি আছে ওই ধানের শীষেও ধান নেই। উপজেলার ফতেহপুর, পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের বোরো ফসলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কৃষি অধিদপ্তর বলছে প্রায় দেড় হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এদিকে গত সোমবার (১৩ এপ্রিল) সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী এমপি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ধলিজুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রব (৬৫) বলেন, কিলা (কিভাবে) ভালা থাকতাম খউকা (বলেন)। ৫০ কেয়ার (বিঘা) জমি ক্ষেত করছিলাম। কিন্তু হিলে (শিলা) সারা ফালাই দিছে। এক কেয়ার জমিন থাকি ৩ মন ধানও ফাওয়া যাইতনায় (যাবে না)। ধান কাটানির খরচও উঠতো নায়। আমরার সব শেষ।
বেতাহুঞ্জা গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, শিলায় আমাদের সব শেষ। যে ৫-৬ কিয়ার (বিঘা) জমি ক্ষেত করেছিলাম তা থেকে আর ধান পাওয়া যাবে না। এক কেয়ার জমি ক্ষেত করতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু এসব জমি থেকে এই পরিমান ধানও পাওয়া যাবে না।
মেদেনীমহল গ্রামের বর্গা চাষী লুৎফুর রহমান বলেন, ৩৫ কেয়ার জমি ক্ষেত করেছি। অনেক টাকা ঋণ। শিলার আঘাতে সব শেষ। এখন বেঁচে থাকাই মুশকিল। একই অবস্থা ওই গ্রামের আরেক বর্গা চাষী লায়েক আলী। তিনি ৯ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু ধান কাটার আগমূহুর্তে শিলা বৃষ্টি কেড়ে নিয়ছেে সব।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, শিলা বৃষ্টিতে আমরা প্রাথমিক ভাবে ক্ষতির পরিমান ১ হাজার একর দেখিয়েছি। সঠিক ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের জন্য আমাদের কর্মীরা কাজ করছেন। মনে হচ্ছে, ক্ষতির পরিমান বাড়তেও পারে।