রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে লাগাতার অবরোধ
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১০:১৬,অপরাহ্ন ২২ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: নানিয়ারচরে পাহাড়িদের বাড়িঘরে সেটেলার বাঙালিদের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রাঙামাটিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ ৫ দফা দাবিতে নানিয়াচর ভূমি রক্ষা কমিটির ডাকা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে আজ সোমবার থেকে ফের অনির্দিষ্টকালের লাগাতার অবরোধ শুরু হচ্ছে। নানিয়াচর ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সেন্টু চাকমা জানান, শনি ও রবিবার দু’দিনের জন্য এলাকার জনগণের অনুরোধে বিশেষ বিবেচনায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকে ওই সড়কে আবারও লাগাতার অবরোধ চলবে।
অপরদিকে দু’বাঙালি সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নানিয়ারচরের বগাছড়িতে তাদের ভাষায় বাঙালিদের আনারস ও সেগুন বাগানের চারা কর্তনকারী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তিসহ ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় হরতালসহ কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে তারা। রোববার সকালে শহরের আইডিই ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করে ওই দুটি বাঙালি সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলার আহবায়ক বেগম নুর জাহান ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলার সহসভাপতি মো. তুহিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বেগম নুর জাহান বলেন, ১৫ ডিসেম্বর রাতে কতিপয় উপজাতীয় সন্ত্রাসী ন্যানিয়ারচরের বগাছড়িতে নিরস্ত্র অসহায় গরিব কৃষকদের ৪ লাখ আনারসের চারা এবং ২০ হাজার সেগুনের চারা কেটে ফেলে। এতে কৃষকদের কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, যা অপূরণীয়। সন্ত্রাসীদের এমন অপকর্মের পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে আন্তর্জাতিক চক্র ইউএনডিপি ও সিএইচটি কমিশন। পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিসহ গরিব কৃষকদের সব ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন ও সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে। অন্যথায় হরতালসহ কঠিন কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হব। এছাড়া বাগান কর্তনকারী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আগামী মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা করেন বেগম নুর জাহান।
প্রসঙ্গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়ি চৌদ্দ মাইল নামক এলাকার তিন পাহাড়ি গ্রাম সুরিদাসপাড়া, বগাছড়ি ও নবীন তালুকদার কার্বারিপাড়ায় পাহাড়িদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয় সেটেলার বাঙালিরা। আগের রাতে বাঙালিদের আনারস ও সেগুন বাগানের চারা কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তার জের ধরেই অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় বাঙালিদের আগুনে পুড়ে যায় পাহাড়িদের অর্ধশতাধিক বাড়ি ও দোকানঘর। ঘটনার প্রায় সপ্তাহের পরও আতংক কাটেনি পাহাড়িদের মাঝে। ফের হামলার আশংকায় এখনও বনে-জঙ্গলে রাত কাটাতে হচ্ছে বলে জানান দুর্গত লোকজন। তারা এখনও খোলা আকাশের নিচে দুর্বিষহ বাস করছে। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে তাদের কাটছে মানবেতর কাল।
ওদিকে ১ম ধাপে পনের পরিবারের ঘর পুনর্নিমাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাকিদের বাড়িঘর পর্যায়ক্রমে পুনর্র্নিমাণ করে দেয়া হবে বলে প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে। এছাড়া ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ উদ্দিন আহমদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি সরকারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এর মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে ঘটনার ছয়দিন পরও এখনও কোনো পক্ষ বিষয়টি নিয়ে মামলা করেনি। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুুর রশীদ জানান, এ পর্যন্ত ঘটনার ব্যাপারে থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম চলছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। এলাকায় পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর টহল রয়েছে।