রংপুরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে, শঙ্কায় সেচ
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৪৫:৪৮,অপরাহ্ন ৩০ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় রংপুর অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে কৃষি জমি সেচ সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রংপুর বিএডিসি (সেচ) অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আগাম নেমে যেতে শুরু করেছে। গত বছর এ সময় পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে থাকলেও এ বছর অনেক স্থানে পানির স্তর ২৬ থেকে ২৭ ফুট নিচে নেমে গেছে। যখন পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে তখন এ অঞ্চলে পানির স্তর ১২ ফুট নিচে পাওয়া যায়।
কৃষি বিভাগের ধারণা, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন এবং তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।
পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে ঠিকমতো পানি উঠে না। ফলে আসন্ন বোরোসহ অন্যান্য ফসলের প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমির চাষ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।
রংপুর বিএডিসি (সেচ) অফিসের কর্মকর্তারা জানান, রংপুরের বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নিচে নেমে গেছে। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকায় ২৬ থেকে ৩৮ ফুট নিচে পানি পাওয়া যায়।
পানির স্তর ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়ায় রংপুর অঞ্চলে কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কৃষিবিদরা জানান, এ অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ও অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে কৃষি উৎপাদন দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে।
প্রতি বছরই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১ থেকে ২ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে অগভীর সেচ পাম্পগুলো ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর গর্তে নামিয়ে সেচ কাজ চালানো হচ্ছে। তাতেও ঠিকমতো পানি না ওঠায় গভীর পাম্পগুলো ৫ থেকে ৬ ফুট গভীরে নামিয়ে পানি উত্তোলন করা হয়।
বর্ষা ও শীত মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই নদ-নদী ও খাল-বিলগুলোতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। তাছাড়া কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যাপকভাবে ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভের পানি সঞ্চয় ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে।
বিশেষ করে কৃষিকাজে ব্যবহৃত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প, বিএডিসি ও পানাসি প্রকল্পের হাজার হাজার গভীর নলকূপের পাশাপাশি লাখ লাখ কৃষক ব্যক্তিগতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করছে।
রংপুর বিএডিসি’র সেচ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম সাইদুল আলম জানান, অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে মৌসুমের পিক আওয়ারে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়।
তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পাওয়া যেতে পারে।