যৌনকর্মীদের বিষয়ে রাষ্ট্র তুমি সংযত হও —ড. মিজানুর রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১২:৩৯,অপরাহ্ন ২৩ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
যৌনকর্মীদের জীবন ও জীবিকার অধিকার প্রশ্নে রাষ্ট্রকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তাদের প্রতি ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ না হয়ে ‘সংবেদনশীল’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার যৌনকর্মীর জীবন ও জীবিকার অধিকার বিষয়ে এক গণশুনানিতে এ কথা বলেন তিনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ চারটি সংগঠন এই গণশুনানির আয়োজন করে। আয়োজক হিসেবে ছিল মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন সংহতি, সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক ও সোয়াসা।
রাষ্ট্রকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত করে মোট ১০টি সিদ্ধান্ত ও দুটি সুপারিশ করা হয়েছে গণশুনানিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলে এ শুনানি। মিজানুর রহমান বলেন, ‘যে কোনও ধরনের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করুন। প্রয়োজনে কমিশন আইনি লড়াইয়ে আপনাদের পাশে থাকবে।’ সাত যৌনকর্মীর অভিজ্ঞতা শোনার পর তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠানে বিচারকের ভূমিকায় এসে আমি মর্মাহত, লজ্জিত। এনাফ ইজ এনাফ। রাষ্ট্র তুমি সংযত হও।’
সারাদেশ থেকে আসা যৌনকর্মী ও যৌনকর্মীদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলোর উপস্থিতিতে এই গণশুনানিতে পুনর্বাসন সমস্যা, পুলিশি ও পাড়া মহল্লার সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ও হয়রানি নিয়ে আলোচনা করেন যৌনকর্মীরা। তারা বলেন, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলার শিকার হয় তারা। কোথাও বিচার চাইতেও যেতে পারে না। উল্টো তাদেরকেই চুরি, ছিনতাই, পাচারসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়।
তারা প্রত্যেকে বলেন, ‘ভোটের অধিকার আছে যখন, তখন রাষ্ট্র আমাদের মৌলিক অধিকার পূরণে বাধ্য।’ তাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন নারীপক্ষের সদস্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেরদৌস আজিম, অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন খান আরেফিন, আইনি সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্লাস্টের আইনজীবী শিপ্রা গোস্বামী ও নারীনেত্রী খুশী কবির। এই প্রথমবারের মতো যৌনকর্মীদের নিয়ে এ ধরনের একটি আয়োজন হলো। এই গণশুনানি যৌনকর্মীদের অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী মমতাজ বেগমের প্রতি উৎসর্গ করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বিচারক হিসেবে যে সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান সেগুলো হলো- পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত পেশা হিসেবে যৌনকর্মকে স্বীকৃতি দিতে হবে, পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে, যৌনপল্লীর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, আদালত ও বিচারকদের আরও সংবেদনশীল হতে হবে।
যারা আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তাদের উদ্দেশে মিজানুর রহমান বলেন, যারা নির্বাচন করছেন তারা প্রতিনিধি হিসেবে যেন যৌনকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় মনোযোগী হন। পাশাপাশি যৌনকর্মীদের আইনি সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ওপরও জোর দেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সোয়াসার নাতাশা আহমদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের মহুয়া লেয়া ফলিয়া, ড. জাফরুল্লাহ ও নারীনেত্রী শিরিন হক প্রমুখ।