যে কারণে হারলেন সিলেটী বাঙালি কন্যা রাবিনা খান
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩১:২০,অপরাহ্ন ২৪ জুন ২০১৫
প্রবাস ডেস্ক :: লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র নির্বাচনে রাবিনা খান প্রার্থী হয়েছিলেন। টাওয়ার হ্যামলেটসের দু’বারের নির্বাচিত মেয়র লুৎফুর রহমানের বলয়ের বেশ প্রভাবশালী একটি নাম রাবিনা খান। গত দেড় টার্মে হাউজিং কেবিনেটে সদস্য হিসেবে কাজও করেছেন রাবিনা। তাছাড়া লেখক হিসেবেও তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। ২০১৪ সালে ‘হিরো অব দ্যা ইয়ার’ হিসেবে ইউরোপিয়ান ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি।
সিলেটের এক নিভৃত পল্লীর মেয়ে রাবিনা খান মাত্র চার বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে ব্রিটেনে আসেন। লুৎফুর রহমান সংশ্লিষ্ট বলয়ের প্রত্যাশা ছিল লেবার পার্টির প্রার্থী জন বিগসের সঙ্গে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই জমিয়ে তুলতে এমবিএ ডিগ্রিধারী রাবিনা খানই যোগ্যতম। তাদের এ প্রত্যাশাটি ভূল ছিল না, সেটি নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্টও হয়ে উঠেছে। রাবিনা খান লুৎফুর রহমানের আশির্বাদে নির্বাচনী লড়াইয়ে বেশ প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষমও হন। শক্তিশালী প্রার্থী জন বিগসের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ২৬ হাজার ৩৮৪ ভোটে পান তিনি।
নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর রাবিনা খান বলেন, ‘আমি রাজনীতি করছি প্রায় পাঁচ বছর ধরে। আমার প্রতিপক্ষ জন বিগস রাজনীতি করছেন ৩০ বছর ধরে। সুতরাং আমি যে ভোট পেয়েছি এটাই আমার জন্য বিশাল পাওনা।’
তবে এ ভোট নির্বাচনে জয়লাভের জন্য যথেষ্ট ছিল না। যদি ৩০ শতাংশের নিচে ভোট কাস্ট হতো তাহলে হয়তো রাবিনা খানের পক্ষে বিজয়ী হওয়া অসম্ভব ছিল না। আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, যতো কম ভোট কাস্ট হবে রাবিনা খানের পক্ষে জয়ের পাল্লা ততোই ভারি হবে। এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৩৮ শতাংশ (৩৭.৭৩) ভোটার। ২০১৪ সালের চেয়ে এই হার প্রায় ১০ শতাংশ কম হলেও রাবিনা খানের পরাজয়ের জন্য ৩৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। তখন রাবিনা খানের জয়ের আশাবাদ তীব্র হয়ে উঠে। কিন্তু বিকেলের দিকে ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পোস্টাল ভোট যোগ হওয়ায় রাবিনা খানের জয়ের আশাবাদ ক্ষীণ হয়ে ওঠে।
ভোট গণনা শুরুর সময় যখন জানা যায় ৩৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন তখনই রাবিনা খানের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। অর্থাৎ তুলনামূলক বেশী ভোটারের উপস্থিতি রাবিনা খানের স্বপ্ন ধুলিসাৎ করেছে।
অন্যদিকে রাবিনা খানের পরাজয়ে বড় ভূমিকা কিন্তু লুৎফুর রহমানই। যদিও তিনি রাবিনাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। রাবিনার পক্ষেও খেটেছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, রাবিনা খান লুৎফুর রহমানের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন। নির্বাচনে নিজের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতাও উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন তিনি। নিজের একান্ত কোনো পরিচয় তুলে ধরতে রাবিনা ব্যর্থ হন। একজন প্রার্থী যদি নিজের ব্যক্তি পরিচয়েও অন্য আরেকজনের উপর নির্ভর করেন সেটি কোনোভাবেই বিজয়ের দ্বার খুলে দিতে পারে না। বাঙালি ভোটের অতিরিক্ত ভরসাও রাবিনা খানের পরাজয়কে তরান্বিত করেছে।
এমনকি নির্বাচনের পোস্টারেরও লুৎফুরের জনপ্রিয়তায় চাপা পড়েন রাবিনা খান। লুৎফুর রহমান যখন মেয়র ছিলেন তখন হাউজিং থেকে শুরু করে সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশংসাই যেতো লুৎফুরের পকেটে। রাবিনা খানকে ওই সময় আলাদাভাবে চেনা যায়নি।
নির্বাচনে রাবিনা প্রার্থী হওয়ার পর লুৎফুর অনেক ক্রেডিট তাকে (রাবিনা) দিতে চাইলেও সেটি খুব একটা গ্রহণযোগ্য যে হয়নি তার প্রমাণ পাওয়া গেছে ফলাফলে। লুৎফুর রহমানের পরিচয়ে পরিচিত হওয়া রাবিনা খানকে বহন করতে হয়েছে লুৎফুরের দুর্নামের ভারও। এটিও নির্বাচনে তার পরাজয়ের বড় কারণ হয়ে ধরা দিয়েছে।