যে কারণে গুলশান কার্যালয় ছাড়ছেন না খালেদা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৯:০৩,অপরাহ্ন ১১ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক: গুলশান কার্যালয়ে এক সপ্তাহ ধরে ‘অবরুদ্ধ’ থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবাধ চলাচলের সুযোগ দানের পাশাপাশি নতুন নির্বাচনের জন্য যথাশীঘ্র গ্রহণযোগ্য সমাধানে না পৌঁছা পর্যন্ত কার্যালয়েই থাকবেন তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেলে অবরোধ কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। এমনকি আগামী সপ্তাহ থেকে অবরোধের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে হরতালও। সুযোগ থাকলেও তিনি আপাতত বাসায় যাবেন না। বিএনপি নেতাদের যুক্তি, যেহেতু গুলশান কার্যালয় থেকেই অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, তাই এ কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন বেগম জিয়া। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গুলশান কার্যালয় থেকে বাসায় গেলে বেগম জিয়া সব রাজনৈতিক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইভাবে অবরুদ্ধ দশা থেকে বেরিয়ে গেলে গুলশান কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেওয়া হতে পারে। তাই তিনি আপাতত গুলশান কার্যালয়েই থাকবেন।
সূত্র জানায়, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কিংবা অন্য কোথাও সভা-সমাবেশের সুযোগ দিলে ‘অবরোধ’ কর্মসূচি শিথিল করার বিষয়টি মাথায় রেখেছেন বেগম জিয়া। অবরুদ্ধ থাকায় আজ টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমার আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে পারেন নি বেগম জিয়া।
এদিকে পুলিশি পাহারার মধ্যে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থার এক সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে গতকাল। ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে কর্মসূচি ঘোষণার পর ওই কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হন তিনি। দুই শতাধিক পুলিশসহ সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর এই বাড়িটি ঘিরে রাখে। মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য গতকাল দিনভর মূল ফটকের তালা খোলা ছিল। এ দিন পর্যন্ত বেগম জিয়া কার্যালয়ের দোতলায় নিজের চেম্বার ও পাশের একটি কক্ষে চলাচল সীমাবদ্ধ রাখেন। দলীয় সূত্র জানায়, গতকাল বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদকের স্ত্রী তাহমিনা রুশদী লুনা দেখা করেন।
এ সময় তার সঙ্গে বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্নব ও মেয়ে নাইয়ারা সাওয়াল ছিলেন। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য আপেল, কমলা, আঙুর ও পেঁপেসহ বিভিন্ন রকম ফলমূল নিয়ে আসেন এবং প্রায় আধাঘণ্টার মতো কথাবার্তা বলেন। এরপর সাবেক কেবিনেট সচিব এস এম হালিমের নেতৃত্বে সাবেক আমলাদের একটি প্রতিনিধি দল বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছেলে তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল বান্দ বানুর বাসা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য নাশতা আনা হয়। প্রতিদিনের খাবার এ বাসা থেকেই আসছে।
তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদার বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু নিজেই খাবার রান্না করে পাঠাচ্ছেন। খাবারের তালিকায় সকালের নাশতায় থাকছে পাউরুটি, আটার রুটি, কুসুমবিহীন ডিম ভাজি, সুজির হালুয়া, ফলের রস ও দই। খালেদা জিয়া সাধারণত দুপুরের খাবার খান না। রাতের খাবারের তালিকায় থাকছে সাদা নরম ভাত, মুরগি বা মাছের ঝোল, ফুলকপি বা শিম ভাজি, মুরগির সুপ ইত্যাদি। গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান বলেন, ‘চেয়ারে বসেই চোখ বুঁজে ঘুমাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে কাজ করছি।’ দোতলায় অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন কেমন আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম পিপার স্প্রের প্রতিক্রিয়ায় অসুস্থ। শ্বাসকষ্টটা এখনো আছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি নেবুলাইজার নিচ্ছেন। তবে মানসিকভাবে ম্যাডামের মনোবল দৃঢ় রয়েছে।
সার্বক্ষণিক নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। কর্মসূচির খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমাদেরও বিভিন্ন কাজের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন।’ তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে বিশিষ্টজনরা টেলিফোন করছেন বলেও মারুফ কামাল জানান। তিনি উল্লেখ করেন, গত সোমবার পুলিশ কার্যালয়ের ভিতরে পিপার স্প্রে ব্যবহার করার পর অসুস্থতা থেকে বেগম খালেদা জিয়ার খাবারের রুচি কমে গেছে। এ কারণে তার খাবার রান্নায় বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সঙ্গ দিতে গত সাতদিনে তার সেজ বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু ও তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত কমোডর শফিক-উজ জামান এসেছিলেন। গতকাল দুপুরে নূরে আরা সাফাসহ মহিলা দলের কয়েক নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত শনিবার রাতে গুলশানের বাসা থেকে হালকা খয়েরি রঙের শিফন শাড়ি পরে এই কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। ওই শাড়িতেই তাকে একদিন কাটাতে হয়। শনিবার রাতে খালেদার গুলশানের বাসা থেকে একটি খাট ও মাদুর আনা হলেও তা চেম্বারের পাশের কক্ষে পাতা হয় পরদিন দুপুরে। ফলে প্রথম দিন নিজের চেম্বারে চেয়ারে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেন তিনি।
অফিসে অর্ধশত নেতানেত্রী ও স্টাফ গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ে প্রথম দিন থেকেই অবস্থান করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুব আল আমিন ডিউ, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, প্রেস উইংয়ের সদস্য শামছ্উদ্দিন দিদার, সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, বিলকিস ইসলামসহ ব্যক্তিগত স্টাফ ও নিরাপত্তা স্কোয়াডের মোট ৪৩ জন সদস্য। দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য আনা শীতের কম্বল নিচতলার মেঝেতে বিছিয়ে সেখানে দলের নেতা, অফিস কর্মকর্তা ও কর্মীরা রাতযাপন করছেন। অনেকে নিচতলায় পুরনো সোফা ও চেয়ারের মধ্যেই শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছেন। অবরুদ্ধ কার্যালয়ের বদ্ধ আর গুমোট পরিবেশে কেউ কেউ ঠাণ্ডা আর জ্বরে ভুগছেন। বাইরে থেকে খাবার গেলে খাওয়া-দাওয়া হয়, অন্যথায় অপেক্ষা করতে হয় অবস্থান নেওয়া নেতা-নেত্রী ও স্টাফদের।