যুক্তরাষ্ট্রে শুনানি : গণতন্ত্রের স্বার্থে দুই দলের সংলাপে বসা উচিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪০:৩২,অপরাহ্ন ০১ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক ::
পরিস্থিতি উপলব্ধি করে গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের সংলাপে বসা উচিত বলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রেপ্রিজেন্টেটিভসের এক শুনানিতে মত দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাউস অব রেপ্রিজেন্টেটিভসে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কিত সাব কমিটির শুনানিতে এ মত দেয়া হয়।
এতে আরো বলা হয়, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থান ত্বরান্বিত হবে। ধর্মকে যারা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে, তারা আরও জঙ্গিরূপ ধারণ করতে পারে।’
সাব কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেস সদস্য ম্যাট স্যালমন বলেন, ‘এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হবে। এর প্রধান শিকার হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের সংলাপে বসা উচিত।’
ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে ‘বাংলাদেশ’স ফ্র্যাকচার: পলিটিক্যাল অ্যান্ড রিলিজিয়াস এক্সট্রিমিজম’ শীর্ষক এই শুনানিতে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আরো পাঁচজন বক্তব্য দেন।
এরা হলেন- হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, ডেভিস ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ফরেন পলিসি ও এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিস; ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ; হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের সরকার সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক জে কানসারা; ইউএস-বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড রিলেশন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট স্টিভেন ডি ফ্লিশলি এবং ইন্ডিয়া, পাকিস্তান অ্যান্ড সাউথ এশিয়া কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো অ্যালিসা আইরেস।
লিসা কার্টিস বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ইসলামী জঙ্গিরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উল্টে দিতে পারে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অচলাবস্থা ২০০৭ সালের মতো আবারো বাংলাদেশকে সামরিক হস্তক্ষেপের পথ নিয়ে যেতে পারে।
তিনি মনে করেন, ‘শেখ হাসিনা যে কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশ শাসন করছেন তাতে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাধা না দেয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি আরো সহিংস রূপ পাবে এবং উগ্র ইসলামী দলগুলো আরো সহজে দলভারি করতে পারবে।’
বিরোধী দলের যে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী কারাগারে আছে, তাদের ছেড়ে দিতে অথবা সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচার শুরু করতে বাংলাদেশ সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেওয়া উচিত বলেও মত প্রকাশ করেন কার্টিস।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিরপরাধ পথচারীদের হত্যার ঘটনায় যারা দায়ী, বিশেষ করে পেট্রোল বোমা ছুড়ে যেসব হত্যার ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন।’
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য বেশ কিছু বিষয় জরুরি। জনমতের সঠিক প্রতিফলনের জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি, অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, সব দলের জন্য রাজনৈতিক মত প্রকাশ ও কর্মকাণ্ডের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ রাষ্ট্রের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অবসান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে বিরোধীসহ সব দলের সহিংসতা বন্ধ করা।
জঙ্গিবাদের বিস্তার ঠেকানোর স্বার্থে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণার জন্য বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের জে কানসারা।
সেই সঙ্গে জামাত-শিবিরকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করে তাদের নেতাকর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা করার পক্ষে মত দেন তিনি।
সাব কমিটির এই শুনানিতে কমিটির প্রভাবশালী সদস্য গ্রেস মেং বলেন, গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী আইনের শাসন অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।
অ্যালিসা আইরেস গণতন্ত্র ও সুশাসন খাতে বাংলাদেশকে আরো বেশি সহযোগিতা, সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা জোরদার এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমঝোতায় সহযোগিতার সুপারিশ করেন।
শুনানিতে শ্রম খাতের সামগ্রিক অস্থিরতার অবসান না ঘটা পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল না করা; গণতান্ত্রিক আচরণ এবং সুশাসনের ক্ষেত্রে ‘সত্যিকারের অগ্রগতি’ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ রাখার সুপারিশও করেন বক্তারা।
এছাড়া শুনানিতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব এবং পুলিশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ না দেয়ার বিষয়ও উঠে আসে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ কিছু নেতা-কর্মী এ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।