যত দোষ ফেসবুকের!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৪৯:৫৯,অপরাহ্ন ২৯ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখার চিন্তা করছে সরকার, জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ তবে এটা হাস্যকর এবং অবাস্তব – মন্তব্য অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও তথ্য-প্রযুক্তি বিশেজ্ঞদের৷
চলতি প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে৷ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখার কথা বলেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কিনা, এ বিষয়ে ভাবছে সরকার৷” ইতিমধ্যে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান৷ আগামী বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে৷ শিক্ষামন্ত্রী চাইছেন প্রথমবারের মতো এই পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক বন্ধ রাখতে বাংলাদেশে৷
তিনি জানান, ‘‘পরীক্ষার সময় ফেসবুকের মাধ্যমে যে বিভ্রান্তি ছড়ায়, আইন করে তা বন্ধ করা যায় কিনা – তা দেখতে বলেছি৷” তবে মোবাইল ফোন নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন মন্ত্রী৷ এ সব নিয়ে এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান প্রশ্ন ফাঁস বা ফেসবুকে বিভ্রান্তি রোধে এ সংক্রান্ত শিক্ষা আইন ও আইসিটি আইনে মামলা, প্রশ্নপত্র ছাপানোর স্থান বিজি প্রেসে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির মতামত দেন৷
তবে শিক্ষামন্ত্রীর ফেসবুক বন্ধের কথায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি৷ তিনি শুক্রবার বলেছেন, ‘‘প্রশ্নপত্র পত্র ফাঁসের খবর বের হলে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটা ‘প্রেস নোট’ পাঠিয়ে দিয়ে বলে এটা গুজব৷ কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি৷ জাফর ইকবালের মতো লোক প্রশ্নপত্র ফাঁসে প্রমাণ দেখান৷ আর আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বলেন যে, প্রয়োজন হলে ফেসবুক বন্ধ করে দেবো৷ তারপর হয়ত তিনি বলবেন টুইটার, মোবাইল, বিদ্যুৎ বন্ধ করো দেবো৷ একদিন তিনি বলবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই বন্ধ করে দেবো৷ এটা কোনো সমাধান নয়৷”
তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে৷ দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে৷ দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷”
তথ্য প্রযুক্তিবিদ সাবির আহমেদ সুমন বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী হয়ত প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে তাঁর কঠোর এবং দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করেছেন ফেসবুক বন্ধ করার কথা বলে৷ তবে পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখা প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হবে না৷ কারণ ফেসবুক বন্ধ করলে অন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করবে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা৷”
তিনি বলেন, ‘‘এবার ফেসবুকের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে তো আর প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়নি, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ সুতরাং প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে হবে৷ গোড়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ফেসবুককে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷”
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ এর ব্যবহারকারী বাড়ছে দ্রুত গতিতে৷ ২০১২ সালে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহকারীর সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ৷ আর চলতি বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাড়ায় ৭৮ লাখ৷ তথ্য-প্রযুক্তিবিদ সাবির আহমেদ সুমন মনে করেন, এরই মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারী এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে৷ এই ব্যবহারকারীদের ৫০ ভাগের বয়স ১৭ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে৷
বিটিআরসি-র সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৪ কোটি ৮ লাখ ৩০ হাজার৷ এর মধ্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৮ হাজার৷ আর মেবাইল ফোনে ফেসবুক ব্যবহারীর সংখ্যাও অনেক বেশি৷
উল্লেখ্য, এবার প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেই ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে৷