মোবারক হোসেন ট্রাইব্যুনালে হাজির
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:০৪:২২,অপরাহ্ন ২৪ নভেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। সকাল সাড়ে ৯টায় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
রবিবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। সদস্যরা হলেন-বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে ১৩তম রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
গত ২ জুন এ মামলাটি বিচারিক কার্যটক্রম সম্পন্ন করে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘ ছয় মাস মামলটি অপেক্ষমান রাখার পর সোমবার রায়ের জন্য দিন ধার্যি করেন।
এ মামলার প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান দাবি করে বলেন, একাত্তর সালে মোবারক হোসেন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং স্বাধীনতাকামীদের পাক বাহিনীর সহায়তায় প্রায় একশত ৩৩ জনকে হত্যা করেছেন।
এ অপরাধে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলেও তিনি আশা করেন।
অন্যদিকে আসামি মোবারকের পক্ষের আইনজীবী তারিকুল ইসলাম বলেন, মোবারকের বিরুদ্ধে যে সব অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নাই। তার বিরুদ্ধে রাজাকার কমান্ডার বলে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগে তিনি খালাস পাবেন বলেও আশা করেন তিনি।
এর আগে গত ২১ মে মোবারকের পক্ষে আইনী পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম। এর আগে মামলার মূল বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন মোবারকের আরেক আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। এছাড়া মোবারকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী তার আইনী যুক্তিতে বলেন, একাত্তর সালে মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় হিন্দুদের মন্দির দখল করে মূর্তি ভাংচুর করে চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। এটি একটি পরিকল্পিত অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
সাক্ষীদের সাক্ষ্যসহ যাবতীয় তথ্য প্রমানের মাধ্যমে মোবারকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণে প্রসিকিউশন সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।এ জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি স্বরুপ মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করেছেন আসামি মোবারক হোসেন নির্দোষ। পচাঁ গলা, বাসি, দূর্গন্ধযুক্ত বিষয়কে প্লাষ্টার করে প্রসিকিউশন দাড়ঁ করানোর চেষ্টা করছে। মোবারকের মামলা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ মামলায় তিনি খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করে আসামিপক্ষ।
এর আগে গত বছর ২০ মে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১২ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেছেন। তারা হলেন মামলার আইও শ্যামল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা দারুল ইসলাম, শহীদ আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম ও ছেলে রফিকুল ইসলাম, মো. খাদেম হোসেন খান, আলী আকবর, মো. আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপাল মল্লিক, আব্দুস সামাদ, শহীদ জায়া ভানু বিবি, আব্দুল হামিদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট চমন সিকান্দার জুলকারনাইন। গত ২৫ নভেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহন ও সাক্ষিকে আসামীপক্ষের জেরা শেষ হয়।
এরপর আসামি মোবারক হোসেন নিজে ও তার বড় ছেলে মোহাম্মদ আসাদ উদ্দিন সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়। পরে তাদেরকে জেরা করে প্রসিকিউশন।
২০১৩সালের ১২ মার্চ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে একই বছর ১৬ মে সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। মোবারকের বিরুদ্ধে ৭১’এ মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ৫টি অভিযোগে ২০১৩সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
অভিযুক্ত মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মরহুম সাদত আলীর সন্তান। তিনি প্রথমে জামায়াত ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মোবারকের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার টানমান্দাইল ও জাঙ্গাইল গ্রামে ৩৩ জনকে হত্যা, আনন্দময়ী কালীবাড়ী রাজাকার ক্যাম্পে আশুরঞ্জন দেবকে নির্যাতন, ছাতিয়ান গ্রামের আব্দুল খালেককে হত্যা, শ্যামপুর গ্রামের দু’জনকে অপহরণ করে একজনকে হত্যা এবং খরমপুর গ্রামের একজনকে আটক রেখে নির্যাতন।
এসব অপরাধ ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
মোবারক হোসেনের পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার আখাউড়া থানার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে। তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মোবারক হোসেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের রুকন ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দেন। তবে মোবারক হোসেন তার সাক্ষ্যে দাবি করেন তিনি সব সময়ই আওয়ামীলীগ করতেন। এখনও আওয়ামী লীগেই আছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রতিহিংসামুলক।