মেয়েরা বাড়িতে বসেই বড়লোক!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৪:৪৩,অপরাহ্ন ১৭ নভেম্বর ২০১৪
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক::
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেয়েদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ‘বাড়ি বসে বড়লোক’। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস।
প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে চলতি বছরের মার্চ থেকে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪ জেলা ও ২৭৬টি উপজেলায় কার্যক্রম চলবে। শিক্ষিত বেকার মেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং পেশার মাধ্যমে উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য।
টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম জানান, ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পরিবারের উন্নয়ন’ই টিএমএসএস’র লক্ষ্য। তাই নীতিগতভাবে নারী ফ্রিল্যন্সারদের জন্য টিএমএসএস থেকে সহজ শর্তে মডেমসহ কম্পিউটার ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রশিক্ষণটি মেয়েদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২৭৬টি উপজেলার প্রত্যেকটি থেকে ৪৫ জন করে ১২ হাজার ৪২০ জনকে ২ দিনের বেসিক প্রশিক্ষণ এবং বেসিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৩৫ জন করে প্রতি জেলায় ৫ দিনের অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭৫টি উপজেলায় ২ দিনের বেসিক এবং ৩৮টি জেলায় ৫ দিনের অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফিরোজা বেগম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী কর্মসূচি। বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত হতে শিক্ষিত মেয়েদের ফ্রিল্যান্সিংই ভালো উপায়। তবে এজন্য প্রয়োজন সঠিক গাইড ও প্রশিক্ষণ। আমি নিজে এসিও’র কাজ করে ঘরে বসেই আয় করছি।’
কর্মসূচি প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ করে, নিজেকে চেনাতে সাহায্য করে। এর সাফল্য অর্জনে কি করা প্রয়োজন তা প্রশিক্ষণার্থী উপলদ্ধি করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের এ সময়ে মেয়েদেরকে আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী করতে চাই। তাই আমাদের এ আয়োজন। টিএমএসএস’র মতো স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে পাশে পেয়ে লক্ষ্যপূরণে আমাদের যাত্রা সহজতর হয়েছে। এটি একটি পাইলট কর্মসূচি। এর সাফল্যের উপর ভিত্তি করে আমরা আরো বৃহৎ কর্মসূচি হাতে নেবো।’
আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় যারা অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি তাদের টিএমএসএস’র হেল্প ডেস্ক সহায়তা করছে। ইতোমধ্যে সরকার অনুমোদিত ৬৫০ লাখ টাকায় বাজেটের পাশাপাশি টিএমএসএস নিজস্ব ফান্ড থেকে ইন-কাইন্ড ২৫৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করছে।
মেয়েরা বাড়িতে বসেই বড়লোক!টিএমএসএস’র পরিচালক (‘বাড়ি বসে বড়লোক’ কর্মসূচির ফোকাল পয়েন্ট) নিগার সুলতানা বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সার পেশায় যাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রত্যাশিত হারে কর্মসংস্থান হবে এবং সরকারের উপর চাকরি প্রত্যাশিদের চাপ অনেকাংশে কমবে এবং রেমিটেন্স বাড়বে। তবে এটি খুব সহজ কাজ নয় এজন্য প্রয়োজন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ। বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় মেয়েদের প্রচণ্ড আগ্রহ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ছেলে-মেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং পেশায় অনেক দক্ষ। তাই প্রতিটি উপজেলায় অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অধিকতর বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হলে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরাও ফ্রিল্যান্সিং করে গার্মেন্ট সেক্টরকে ছাড়িয়ে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।’
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সমস্যা সম্পর্কে নিগার সুলতানা বলেন, ‘দক্ষতা এবং পরিপূর্ণ গাইড এখানে গুরুত্বপূর্ণ। দুইদিনের বেসিক ট্রেনিংয়ে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং থেকে পেমেন্ট মেথড পর্যন্ত বিস্তারিত হাতে-কলমে শেখানো হয়। ৫ দিনের অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণে এসইও বা অ্যাডমিন সাপোর্ট শিখানো হয়। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রধান সমস্যা হলো ইন্টারনেট স্পিড খুবই দুর্বল।’ এই বিষয়ে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচির অধীনে টিএমএসএস’র আম্ব্রেলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, আর যারা প্রশিক্ষণ নেননি, কিন্তু আউটসোর্সিং করে সাবলম্বী হতে চান গুরুত্ব বিবেচনায় তাদের সবার জন্যই টিএমএসএস পর্যায়ক্রমে ৯১৫টি শাখা অফিসে এ সংক্রান্ত আলাদা স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি করে উইং এসটাবলিস্ট করতে যাচ্ছে। যেখান থেকে থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের যুবসমাজকে দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার জনকে ফ্রিল্যান্সার গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’