মৃত্যুদণ্ড রায়ের পর যা বললেন মুজাহিদ
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১০:২৩,অপরাহ্ন ১৬ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ট্রাইব্যুনালেরর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ আদালতকক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের অবস্থান ভুল।’ নিজের অপরাধ স্বীকার না করে অপরাধ করেছেন জেনেও বারবারই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেন তিনি। এর আগে নানা সভা-সমাবেশে মুজাহিদ বলেছেন, ‘দেশে কোনও যুদ্ধাপরাধী নেই।’
অথচ একাত্তরে ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা মুজাহিদ ছিলেন আল-বদর বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের একজন। যে বাহিনীর জন্ম হয়েছিল হত্যা, গণহত্যা-লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য।
এসব বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নানা জায়গায় গা ঢাকা দিলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পালাবদলে অন্য যুদ্ধাপরাধীদের মতো মুজাহিদ সক্রিয় হয়ে ওঠেন দেশীয় রাজনীতিতে। এমনকি মুজাহিদ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্বও পান।
এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সংলাপ শেষে মুজাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কখনও কোনও যুদ্ধাপরাধী ছিলো না, এখনও নেই।’ তখন তার এই বক্তব্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সোচ্চার হন একাত্তরের শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
সেদিন মুজাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনও যুদ্ধাপরাধী নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯১ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিলো, যাদের আওয়ামী লীগ সরকার অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছে। দেশে কোনও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিও নেই। কোনও কোনও দায়িত্বশীল দল এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলার কারণেই ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি কল্পনাপ্রসূত। নিজেদের বানোয়াট একটা উদ্ভট চিন্তা। বাংলাদেশে কোনও স্বাধীনতাবিরোধীও নাই। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছিলো না, এখনও নাই।’
এই বক্তব্যের কারণে সেসময় তাকে প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা কী ছিলো- এ প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব না দিয়ে এই জামায়াত নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেটা আপনারা খোঁজ করে মূল্যায়ন করুন।’
এর মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সে মোতাবেক মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই দিন তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন দলও গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের কয়েকদিন পরেই ২০১০ সালের ৩১ মার্চ মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতের এই নেতা।
একাত্তরের তার ভূমিকা সম্পর্কে সেসময় তিনি বলেন, ‘পাস্ট ইজ পাস্ট। এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন না। যারা একাত্তরে নৃশংসতা করেছে, তাদের ওই সময়ে ছেড়ে দিয়েছিল কেনও? কেনও ক্ষমা প্রদর্শন করা হলো?’
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য জামায়াত ক্ষমা চাইবে কিনা-এরকম একাধিক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে মুজাহিদ বলেন, ‘ওই সময়ের সিদ্ধান্তটি ছিলও রাজনৈতিক। এখন আর ওই প্রসঙ্গ তোলার দরকার নাই।’