মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের ভূমিকা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি সংসদে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৬:৫৩,অপরাহ্ন ২১ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের ভূমিকা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা আছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের কথা বলা নেই। এতে নতুন প্রজন্ম অর্ধসত্য জানছে। তাদের জানাতে হবে, কারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। সে জন্য রাজাকার, আল-বদর ও জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রবিবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।
মোজাম্মেল হক বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাজাকার, আল-বদরসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাজাকার ও আল-বদরদের একটি তালিকা ছিল। একাত্তরে সরকারের বাহিনী হিসেবে তারা বেতন-ভাতা নিত। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আমলে সেই তালিকা ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা নতুন করে ওই তালিকা তৈরি করছি।
মুক্তিযোদ্ধাদের অত্যাধুনিক সনদ ও পরিচয়পত্র দেওয়া হবে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তি দিয়ে এই সনদ ও পরিচয়পত্র তৈরি করা হবে। টাকা জালিয়াতি করা সম্ভব, কিন্তু এই পরিচয়পত্র-সনদ জালিয়াতি করা সম্ভব হবে না।
২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। জাতীয় পতাকা ওঠে না। সেই সব প্রতিষ্ঠান কিভাবে চালু থাকে। তিনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সমহারে ভাতা দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আর মাত্র ১ শ ৩০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ পেলেই সব মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দিতে পারব। সব মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দিতে পারলে কোনও প্রশ্ন উঠবে না, বৈষম্য হবে না।
অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা না থাকায় ক্ষোভ:
বাজেট আলোচনার সময় মন্ত্রীসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। অধিবেশনের শুরুতে উপস্থিত থাকলেও আবুল কালাম আজাদের আলোচনার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন না।
সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংসদ সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সংসদে কথা বলেন। কিন্তু সংসদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা থাকেন না। অর্থমন্ত্রীও এখন নেই। থাকলে ভালো হতো। অর্থমন্ত্রী যদি না থাকেন, তাহলে সংসদ সদস্যরা কী বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা কিভাবে দেখা হবে।
এ সময় স্পিকারের উদ্দেশে তিনি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেখেন কর্মকর্তারা কেউই নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, সংসদে পরামর্শ, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যা কিছু উঠে আসবে, সেগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। অথচ সংসদে আলোচনার পর মন্ত্রণালয় কোনও পদক্ষেপ নেয় না।
বাজেট কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই বিষয়ে কোনও দিক-নির্দেশনা নেই বলে আবুল কালাম আজাদ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইনকাম ট্যাক্সের কথা বহুবার বলেছি। দেশের ১৬ কোটি মানুষ। এনবিআর কত জনের কাছ থেকে ট্যাক্স নেয়। গ্রামে দেখি কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। তারা ট্যাক্স দেয় না। তাদের জিজ্ঞেস করি, ট্যাক্স দাও কি না? তারা বলে, কেউতো দিতে বলেনি। যারা জানে, তারা বলে, ট্যাক্সের পদ্ধতি এমনভাবে করে রেখেছেন, কিভাবে দেব। ঘাটতি বাজেট করছে। অর্থ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে বাজেটের ঘাটতি কমানো যায়। ক্ষুদ্র, মাজারি ও বড় মাপের সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী রয়েছে। ৭০/৮০ লাখ মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স নেওয়া তো কঠিন বিষয় না।
আবুল কালাম আরও বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাতে বাজেট কমানো হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়ন ও দেশ গড়ার জন্য দক্ষ মানুষ দরকার। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কম হলে দক্ষ মানুষ কোথায় পাবেন? বিশ্ব যেখানে এই খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে, সেখানে আমাদের কমছে।
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর দাবি করে দীপু মনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ভতুর্কির টাকায় কেনা ট্রাক্টরকে ট্রাকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দুষ্টের দমনে কঠোর হতে হবে।
বাজেটের ওপর আরও আলোচনা করেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, মুহিবুর রহমান মানিক, তানভীর ইমাম, সানজিদা খানম, শওকত চৌধুরী, মাহজাবিন মোরশেদ প্রমুখ। সবশেষে সংসদের অধিবেশন সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।