মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৫১:১৪,অপরাহ্ন ০২ নভেম্বর ২০১৪
ঢাকা ডেস্ক: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় দেন।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রবিবার এ আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে আনীত ১৪ অভিযোগের মধ্যে ১০ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অর্থাৎ ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ৪টি অর্থাৎ ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি। এর মধ্যে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ফাঁসি ছাড়াও প্রমাণিত অন্য ৮ অভিযোগে আরও ৭২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাসেম আলী। এর মধ্যে প্রমাণিত ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর, ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর এবং ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মীর কাসেম আলী।
এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাদশতম রায়। ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত মামলাগুলোর মধ্যে মীর কাসেমের মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম সবচেয়ে কম সময়ে শেষ হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেমের পক্ষে তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম, আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, শিশির মনির, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম, হায়দার আলী, তুরিন আফরোজ, মোখলেসুর রহমান বাদল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, বিশিষ্টজনরা সেখানে ছিলেন। এজলাস কক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
রায় পড়ার সময় ট্রাইব্যুনালে কাসেম আলীকে উদ্বিগ্ন দেখা গেছে।
বিচার কার্যক্রম চলাকালে মীর কাসেম আলী গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। রায় ঘোষণার জন্য গতকাল শনিবার তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
১. মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে আল-বদর বাহিনী ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর ওমরুল ইসলাম চৌধুরীকে চাকতাইঘাট থেকে অপহরণ করে। তাকে কয়েক দফায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল, পাঁচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল ও একটি চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
২. আসামির নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রামের চাকতাই থেকে লুৎফর রহমান ফারুককে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন ও বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়।
৩. ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামির নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলার বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
৪. ডাবলমুরিং থানার সালাহউদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে আল-বদর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন।
৫. ২৫ নভেম্বর আনোয়ারা থানার আবদুল জব্বারকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলীর সামনে হাজির করা হয়। এরপর তাকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
৬. চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল ও সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন করা হয়।
৭. মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে ৭-৮ জন যুবক ডাবলমুরিং থানা থেকে সানাউল্লাহ চৌধুরীসহ দু’জনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
৮. ২৯ নভেম্বর রাতে নুরুল কুদ্দুসসহ চারজনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন।
৯. ২৯ নভেম্বর সৈয়দ মোহাম্মদ এমরানসহ ছয়জনকে অপহরণ ও নির্যাতন।
১০. আসামির নির্দেশে মোহাম্মদ যাকারিয়াসহ চারজনকে অপহরণ ও নির্যাতন।
১১. জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে অপহণের পর নির্যাতন করা হয়। এতে জসিমসহ পাঁচজন নিহত হন এবং পরে লাশ গুম করা হয়।
১২. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিনজনকে অপহরণ করে নির্যাতন করা হয়। এতে দুইজন নিহত হন এবং তাদের লাশ গুম করা হয়।
১৩. সুনীল কান্তিকে অপহরণ ও নির্যাতন এবং
১৪. নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ ও নির্যাতন।