মালয়েশিয়ার সঙ্গে ৪টি চুক্তি সই
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩৫:৫৯,অপরাহ্ন ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪
পুত্রজায়া: বুধবার ০৩ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ার পারদানা স্কয়ারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিবতুন আবদুল রাজাক এর উপস্থিতিতে দেশ দুটির মধ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ সময় দুই দেশের মধ্যে ভিসা সহজ করার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
দেশ দুটির মধ্যে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়েও ২০১২ সালে গৃহীত সমঝোতা স্মারকের সংশোধনী এনে প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এছাড়া পর্যটন বিষয়ে একটি এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও ঐহিত্য বিনিময় বিষয়েও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এর আগে মালয়েশিয়া সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পুত্রজায়ার পারদানা স্কয়ারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান।
সেখানে সেনাবাহিনীর গার্ড অব অনার ও তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজিবতুন আবদুল রাজাক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক, এটাকে আমরা গ্রেটার হাইটস-এ নিয়ে যেতে চাই’।
“আমাদের দুই দেশের মধ্যে কোনো ধরনের ইরিটেশন নেই। এটা গ্রেটার হাইটসে যাবে, এটা দিয়েই উনি (রাজাক) ওপেন করেছেন।”
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়টি আলোচিত হয়।
মালয়েশিয়ায় প্রায় ছয় লাখের মতো বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। বুধবার স্বাক্ষরিত প্রটোকলের আওতায় দেশটির সারাওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার বাংলাদেশির কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৬০ হাজারে উন্নীত হবে।
দুই দেশের বাণিজ্যের পাল্লা মালয়েশিয়ার দিকে ভারী। বাংলাদেশে প্রতি বছর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য কেনে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যায় সাড়ে ১৩ কোটি ডলারের পণ্য।
শহীদুল হক বলেন, “দুই দেশই বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মত হয়েছে। আপনারা জানেন, যে বাণিজ্য হয় সেটা ডিসপ্রপরশনেটলি ইমব্যালেন্সড। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এটা রিকগনাইজ করেছেন। এটা কমিয়ে আনার জন্য উনি এ ব্যাপারে অ্যাকটিভ উদ্যোগ নেবেন বলে ইন্ডিকেশকেশন দিয়েছেন।”
মালয়েশিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের এফটিএর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। “আমি মনে করি, এটা অনেক বড় কিছু,” বলেন তিনি।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশের পণ্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশেষ করে ওষুধ, পাট পণ্য, সিমেন্ট, সিরামিক, ফুটওয়্যারের বাজার খুলে দিতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন শেখ হাসিনা। নাজিব রাজাক এই বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য গঠিন যৌথ কমিশনের বৈঠক ২০০৫ এর পর হয়নি। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া তা আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।
“বৈঠকে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। পরবর্তী যৌথ কমিশন মিটিংয়ে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হবে।”
নাজিব রাজাক বলেছেন, ২ লাখ ৯৯ হাজার বাংলাদেশি বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কাজ করছে এবং এর বেশিরভাগ নির্মাণকাজে। এ সংখ্যা ও ক্ষেত্র আরও বাড়ানো যেতে পারে।
“তিনি (নাজিব রাজাক) বলেন, এখানে অনেক বাংলাদেশি নানা কারণে বৈধভাবে নেই। বিষয়টা উনারা দেখবেন। তবে এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন,” বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের ‘ডায়ালগ পার্টনার’ হতে চায়। মালয়েশিয়া আগামী বছর আসিয়ানের চেয়ারম্যান হবে।
শহীদুল হক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রিকোয়েস্ট করেছেন ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য যেন সহায়তা করেন। উনি (রাজাক) সম্মতি দিয়েছেন পজিটিভলি সাপোর্ট করবেন।”
উচ্চ শিক্ষা ও কারিগরি বিষয়ে মালয়েশিয়ার যে সহায়তা দিয়ে থাকে, তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নাজিব রাজাক।
“মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবগুলো পয়েন্টই অত্যন্ত গুরুত্বে সঙ্গে রেসপন্ড করেন,” বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
তিন দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন বিকালে কুয়ালালামপুরের গ্রান্ড হায়াত হোটেল থেকে পুত্রাজায়ার পারদানা স্কয়ারে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পৌঁছালে নাজিব রাজাক তাকে অভ্যর্থনা জানান।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়, একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়।
প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে পারদানা মিটিং রুমে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার দুটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বুধবার রাতে পুত্রাজায়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে মালয়েশিয়ার সরকার প্রধানের দেওয়া একটি নৈশভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
নৈশভোজের পর আবাসস্থল গ্র্যান্ড হায়াদ হোটেলে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুর থেকে রওনা হয়ে দুপুরে তার ঢাকা পৌঁছনোর কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার কুয়ালালামপুর পৌঁছনোর পর বাংলাদেশে হাইকমিশন আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। পরে হোটেলে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এস স্যামি ভেলুর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বুধবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে হোটেলে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত একটি সংলাপে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন মালয়েশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জইনুদ্দিন, মানবসম্পদ বিষয়ক উপমন্ত্রী হাজি ইসমাইল হাজি আবদুল মুত্তালিব ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার একেএম আতিকুর রহমান।
বাংলাদেশ সময় বেলা ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।