‘মহিউদ্দিন ও চট্টগ্রাম অভিন্ন দুইটি নাম’
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪১:০৯,অপরাহ্ন ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের অপর নাম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মহিউদ্দিন ছিলেন অগ্রনায়ক। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিএনপির প্রহসনের নির্বাচন সর্বক্ষেত্রে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হিসেবে ছিলেন মহিউদ্দিন। মহিউদ্দিন চৌধুরী একজন অকুতোভয় বীর। আধুনিক চট্টগ্রামের রূপকার মহিউদ্দিন। ’
শনিবার দুপুরে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বহুমাত্রিক জীবন-কাহিনি নিয়ে সাংবাদিক মোয়াজ্জেমুল হক রচিত ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কৌশলী রাজনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন,‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার অবদান ভুলার নয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে যখন স্বাধীনতা বিরোধীরা স্বপরিবারে হত্যা করে তখন আত্মগোপনে চলে যায় মহিউদ্দিন। লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ধ্বংস করে প্রতিশোধ নেয়া। এরপর অন্তরালে থেকে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে একটি সম্মানজনক স্থানে পৌঁছানোর কাজেও মহিউদ্দিনের ছিল যথেষ্ট অবদান। দলের প্রয়োজনে বারবার নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন,‘চট্টগ্রামের স্বার্থ নিয়ে সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভূমিকা ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যখন থাইল্যান্ডকে ইজারা দিচ্ছিল সরকার, তখন প্রথম বিরোধিতা করেছিল মহিউদ্দিন। তার বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত সরকারকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। কর্ণফুলী নদী রক্ষার জন্য কর্ণফুলী সেতু তৈরীতে বাধা দেওয়া ছিল মহিউদ্দিনের দূরদর্শী মনোভাবের ফসল। তার দাবি ছিল ঝুলন্ত সেতু। যাতে কর্ণফুলী নদী রক্ষা পায়। তাছাড়া মেয়র থাকাকালীন চট্টগ্রাম নগরীকে হেলদি সিটিতে পরিণত করতে রাত দিন পরিশ্রম করেছে সে। চট্টগ্রামে শিক্ষা ক্ষেত্রেও এনেছে পরিবর্তন।’
অনুষ্ঠানে মাঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন,‘মহিউদ্দিন চৌধুরী একজন বহুরূপী মানুষ। তাঁর মধ্যে যেমন উগ্রতা আছে, আছে ভালবাসাও। তাছাড়া নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতাও রয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর। ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে মহিউদ্দিন চৌধুরী যেমন পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। ঠিক সেই ভাবে এ চির তরুণ সেনাপতিকে আবার জাগতে হবে বর্তমানে নাশকতার বিরুদ্ধে।’
চট্টগ্রামের উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নের পূর্ব শর্ত উল্লেখ করে বাদল বলেন, ‘চট্টগ্রামের স্বার্থটা সব সময় উপেক্ষিত। আমাদের দাবিগুলো কেন্দ্রে হারিয়ে যায়। কেন্দ্রের কেউ চট্টগ্রামের জন্য কান্না করে না। কিন্তু একজন ব্যক্তি সারা জীবন শুধু চট্টগ্রামের জন্য কান্না করেছেন। তিনি হলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।’ তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের রনাঙ্গনের বীর সৈনিক মহিউদ্দিন চৌধুরী অন্যায়ের কাছে কোনদিন মাথা নত করেনি। মানুষের পক্ষে দিন-রাত পরিশ্রম করে গেছেন। আন্দোলন করেছেন নিপীড়িত মানুষের জন্য। যাদের মুখে হাসি ফোটানোর কেউ নেই, তাদের জন্য আছেন মহিউদ্দিন। দেশের সংবিধানে যে মৌলিক বিষয়গুলো আছে তার মধ্যে চট্টগ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিয়েছেন মহিউদ্দিন। তাই বারবার জনগণের ভালবাসায়ও সিক্ত হয়েছে। সমালোচনাও অনেক হয়েছে। কিন্তু সে থেমে থাকেনি। আরো নতুন উদ্যম নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে মানুষকে দেখিয়েছেন আলোর পথ। তাই মহিউদ্দিন ও চট্টগ্রাম অভিন্ন দুইটি নাম।’
অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল এ দেশ ও চট্টগ্রামকে নিয়ে। কিন্তু এরমধ্যে মাত্র ১০ ভাগ আমি করতে পেরেছি। কারণ বিত্তশালী পরিবারের সন্তান হিসেবে জম্ম নিতে পারিনি। শ্রমিক জনতার সঙ্গে থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। শোষক শ্রেণির কাছে মাথা নত করিনি। প্রতিটি ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেছিলাম। যাতে শিক্ষিত হয়ে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রামকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।’
তিনি বলেন,‘লোকে বলে আমি সবাইকে গালমন্দ করি। কিন্তু তা ঠিক না। চেষ্টা করি সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে। কিন্তু চোখের সামনে যখন কোন অন্যায় দেখি তখন নিজেকে আর সামলাতে পারি না।’ গালমন্দের জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন সাবেক এ মেয়র।
তিনি বলেন,‘বন্দরের টাকা দিয়ে দেশ চলে। কিন্তু বন্দরের উন্নয়নের কথা কেউ চিন্তা করে না। আর বন্দর রক্ষার আন্দোলনে আমি একধাপ এগিয়ে ছিলাম। আগামীতে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ও চট্টগ্রাম রক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করব।’ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইয়ের লেখক মোয়াজ্জেমুল হক।
তিনি বলেন,‘বার মাসে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাজতো তের পার্বনকেও হার মানায়। তাঁর জীবন ক্যানভাসের উল্লেখযোগ্য সংক্ষেপিত অংশ কলমের কালিতে এঁকেছি। এ প্রয়াস আমার প্রথম। জীবিত মানুষকে নিয়ে গ্রন্থ লেখা কঠিন বলে অনুধাবন করেছি। কারণ, প্রতিটি মানুষ নিয়ে মত পার্থক্য থাকে। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়েও সেই মতপার্থক্য রয়েছে। গ্লাসের অর্ধেকে পানিকে দুভাবে বলা যায়। অর্থাৎ অর্ধেক খালি বা অর্ধেক ভর্তি। দুটোই সত্য। অনুরূপভাবে যে কোন মানুষ একজনের জন্য পূজনীয়, অন্যজনের কাছে ঘৃণার হতে পারে। আমি তাঁর চতুর্দিক স্বল্পে স্পর্শ করতে চেয়েছি।’
মোয়াজ্জেমুল হক বলেন,‘মহিউদ্দিন চৌধুরী অস্ত্র হাতে লড়াই করা একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। নন্দিত এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবনাচার, বীরত্বগাথা ও আনন্দ বেদনার খণ্ড-খণ্ড কাহিনীর চৌম্বক বিবরণ নিয়ে এ গ্রন্থ।” প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী,বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল,নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মীনি হাসিনা মহিউদ্দিন,চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এজাজ ইউসুফী,চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার,দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের নগর সম্পাদক এম নাসিরুল হক,দৈনিক আজাদীর প্রধান প্রতিবেদক হাসান আকবর,অধ্যক্ষ হাসিনা জাকারিয়া,‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ বইয়ের প্রকাশক নুরুল আবছার।