মধুমতিতে চর জেগে উঠায় নৌ-যোগাযোগ বন্ধের উপক্রম
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৬:৩০,অপরাহ্ন ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: আগে এক সময় জেলার কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা লঞ্চঘাটে দাঁড়ালে মনে হতো আকাশ মিশেছে নদীর তীরে। নদীর থৈ থৈ পানির দিকে তাকালে চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসতো। এখন সেই মধুমতি নদীর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর। ফলে এ রুটে শুষ্ক মৌসুমে বড় বড় নৌ-যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা বাণিজ্যিক বন্দর ভাটিয়াপাড়া ঘাটের নেই রমরমা অবস্থা। নেই নদীর যৌবনও। নেই কুলিদের কর্মচাঞ্চল্য। এ নদী নির্ভর হাট-বাজারগুলোতে এখন আর সেই জৌলুস নেই। সেই মানুষগুলো আজ কর্মহীন হয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তবে শিকস্তি মানুষ আবার ফিরে পাচ্ছেন সেই ফসলি জমি। জেগে উঠা চরে চাষ হচ্ছে সোনালী ধান ও বাদাম। চরের মানুষেরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। সেই সব নিঃস্ব মানুষ আবারও বাঁচার তাগিদে জেগে উঠা চরে ফসল ফলিয়ে ভাগন্নোয়নের চেষ্টা করছে।
এক সময় গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম ছিল সম্পূর্ণ নদীপথনির্ভর। জেলার ফুকরা, মানিকহার, মাঠলা, চাপাইল ঘাট প্রভৃতি এলাকায় জেগে উঠছে অসংখ্য চর। এসব চরে প্রতি বছর হাজার হাজার মন ধান উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও চাষ হচ্ছে চিনাবাদাম। কিছুদির পরেই বিস্তীর্ণ চর জুড়ে দেখা যাবে সবুজ বোরো ধানের ক্ষেত। ফলে নদী ভাঙনের শিকার মানুষ আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠা চরে প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হবে। এক সময় মধুমতির ভয়াল ছোবলে গ্রাস করে নিয়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, হাট-বাজার, জায়গা-জমি, স্কুল, মসজিদ ও ফসলি জমি।
এ নদী দিয়ে চলাচল করেছে অসংখ্য বড় বড় লঞ্চ, ট্রলার, স্টিমার ও জাহাজ। ধরা পড়তো অসংখ্য রূপালি ইলিশ। মধুমতি নদীকে কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল ভাটিয়াপাড়া নদীবন্দর। এ নদী পথে জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যসামগ্রী পরিবহন করতো। এছাড়া নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করায় খুলনায় নৌ-পথে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রুটটি।
সরেজমিন দেখা গেছে, কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া থেকে চাপাইলঘাট পর্যন্ত প্রায় ছোট-বড় ৩০টি চর জেগে উঠেছে। এ সব চর দখল করে চাষাবাদ করছেন স্থানীয়রা। শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলেও ভাটার সময় চলাচল করা সম্ভাব হয় না। ইছাখালী, দক্ষিণ ফুকরা, মাঠলা, শুকতাইল, বরফা, চাপাইল ও জয়নগরের কোথায়ও কোথায়ও কোমর পানি।
ঘোড়াদাইড় গ্রামের কাঠমিস্ত্রী কলম শেখ জানান, এক সময় আমরা এ নদী দিয়ে লঞ্চে করে খুলনায় যাতাম। জেলার একমাত্র মধুমতি নদীর নাব্যতা আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে জেলার নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর মাঝে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। অপরিকল্পিত নদী শাসন এবং নদী খনন না করায় মধুমতি নদীর এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্য সংকট দেখা দেয়। ফলে গোপালগঞ্জ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বাগেরহাট, ফরিদপুর জেলার মানুষের জীবনের চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীকে খনন করে পুনরুদ্ধারের দাবি স্থানীয়দের।