ভিন্ন মতাবলম্বীরা বাংলাদেশে নিরাপদ নয়: যুক্তরাজ্যের হোম অফিস
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৯:২৫,অপরাহ্ন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে- এমন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীন। যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে বাংলাদেশ সম্পর্কে সংরক্ষিত হালনাগাদ তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ‘কান্ট্রি ইনফরমেশন অ্যান্ড গাইডেন্স, বাংলাদেশ: অপজিশন টু দ্য গভর্নমেন্ট’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যুক্তরাজ্যে মানবিক বা রাজনৈতিক বিবেচনায় কিংবা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চাইলে তাঁদের আবেদন কীভাবে বিবেচিত হবে, এর দিকনির্দেশনা হিসেবে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
ইংরেজি গণমাধ্যম, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংরক্ষণ করা বাংলাদেশ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে ব্রিটিশ হোম অফিসের এই প্রতিবেদনে সন্নিবিষ্ট করা হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিরোধী রাজনীতিক ও নারীদের রক্ষা এবং সহিংসতা দমনে ব্যর্থ বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো দায়ভার ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে, নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করে। তারা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকারীদের সঙ্গে জড়িত। এ বছরের গত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গত বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরবর্তী অবস্থা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচন বর্জন করার কারণে বর্তমান সংসদে বিএনপির কোনো আসন না থাকলেও দলটি এখনো প্রকৃতপক্ষে সরকারের প্রধান বিরোধী পক্ষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এবং খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সহিংসতায় ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে নোয়াখালীতে পুলিশের গুলিতে দুজনের মৃত্যু হয়। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি দলের লোকেরা পেট্রলবোমাসহ ধরা পড়লেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি- এমন তথ্যও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা মামলা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে সরকার নিজ দলের লোকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মোট সাত হাজার ১৭৭টি মামলা প্রত্যাহার করেছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি হত্যা মামলাও রয়েছে। কিন্ত অন্য কোনো দলের কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি।
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন যেই দল ক্ষমতায় যায়, তখন সেই দলের ছাত্রসংগঠনের অস্ত্রধারীরা মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘনকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
খুন, হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে গত বছর ছাত্রলীগ বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে উল্লেখ করে হোম অফিসের নির্দেশনায় বলা হয়, গত ছয় মাসে ছাত্রলীগ ২৫০ বার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, আর অন্য সংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ১৫০ বারের বেশি। অস্ত্রধারী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার বড় কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে হোম অফিসের দিকনির্দেশনামূলক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকার ভিন্নমত এবং সমালোচনাকে সহ্য করে না, বরং এ বিষয়ে সরকার মারাত্মকভাবে আক্রমণাত্মক।
ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন অ্যাক্ট (আইসিটি) ২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯ ও ২০১৩) এবং জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে।