ভারত শীর্ষ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠির দেশ, বাংলাদেশ চতুর্থ
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০১:৩৩,অপরাহ্ন ১৫ জানুয়ারি ২০১৫
অনলাইন ডেস্ক:: অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ আর ভারত শীর্ষে । গত বছর জুলাইতে জাতিসংঘের প্রকাশিত এমডিজি ২০১৪ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, সারাবিশ্বে যতো অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠি আছে, তার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের বাস বাংলাদেশে। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনসহ বেশ কিছু গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, সারাবিশ্বে ১শ’ ২০ কোটি মানুষ অতি দরিদ্র।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে অতি দারিদ্র্যের তালিকায় বাংলাদেশের সামনে অবস্থান করছে ভারত, চীন এবং নাইজেরিয়া। ২০১০ সালের হিসাবে বিশ্বের ১২০ কোটি চরম দরিদ্র লোকের ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশেরই বাস ভারতে। এরপরেই অবস্থান চীনের। এখানে বিশ্বের ১৩ শতাংশ দরিদ্রের বাস। আর নাইজেরিয়াতে বাস ৯ শতাংশের।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সহ বেশ কিছু সংস্থা দারিদ্র্যতা নিরূপণে স্কেল হিসেবে খাদ্যগ্রহণকে ব্যবহার করেছে। সেই হিসাবে যে সকল ব্যক্তি দিনে ২ হাজার ১শ’ ২২ ক্যালরির নিচে খাদ্যগ্রহণ করার সামর্থ্য রাখে, তাদেরকে দরিদ্র এবং যারা দিনে ১ হাজার ৮শ’ ক্যালরির নিচে খাদ্যগ্রহণ করার সামর্থ্য রাখে, তাদেরকে অতি দরিদ্র বা চরম দরিদ্র বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের মাইকেল লিপটন ১৯৮৬ সালে অতি দরিদ্রের একটি সংজ্ঞা নিরূপণ করেন। এই সংজ্ঞায় বলা হয়, যেসকল ব্যক্তি তাদের দৈনন্দিন চাহিদার ৮০ শতাংশ বা তার কম খাদ্যগ্রহণ করে এবং এই খাদ্য যোগানে তাদের দৈনিক উপার্জনের ৮০ শতাংশ বা তার বেশি অর্থ খরচ হয়, তাদেরকে চরম দরিদ্র বলা হয়ে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি অনুযায়ী, যারা দিনে মার্কিন মুদ্রায় ৫০ সেন্টের কম অর্থে খাদ্যগ্রহণ সারে, তাদেরকে অতি দরিদ্র বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। অপরদিকে জাতিসংঘের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যেসকল ব্যক্তি দিনে ১ দশমিক ২৫ ডলার, অর্থাৎ ১শ’ টাকার কম ব্যয়ে জীবনধারণ করে, তারা অতি দরিদ্র।
জাতিসংঘের হিসাবে দেশের মোট জনগোষ্ঠির প্রায় ৪২ শতাংশ দরিদ্র বলে নিরূপিত হলেও গত বছর জুনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর অতি দারিদ্র্যের হার এখন ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এদিকে মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১ হাজার ১৯০ ডলার, অর্থাৎ, দিনে তিন ডলারের বেশি। গতবছর ২৭ জুলাই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত দরিদ্র্যতা পরিস্থিতির ওপর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের ফলাফল ধরে এই প্রাক্কলন করা হয়।
২৯ আগস্ট ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে বাংলাদেশের দরিদ্র্যতা মানচিত্র প্রকাশ করে। এই মানচিত্র অনুযায়ী, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম কুষ্টিয়ায়। আর এ সংখ্যা বেশি কুড়িগ্রামে। কুষ্টিয়া জেলায় এ হার মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ আর কুড়িগ্রামে ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বাস করে ঢাকা বিভাগে (৩২ দশমিক ৩ শতাংশ)। আর সিলেট বিভাগে এ সংখ্যা সবচেয়ে কম (৫ দশমিক ৭ শতাংশ)। এমন তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে ওই মানচিত্রে।
বেসরকারি এনজিও ব্র্যাকের ‘এন্ডিং এক্সট্রিম পোভার্টি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, অতি দরিদ্রের অধিকাংশই ভূমিহীন। এদের মাঝে নারীর সংখ্যা বেশি। অপরদিকে রাজধানীর বস্তিবাসীর প্রায় শতভাগই অতি দরিদ্র। গতবছর ৫ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অধিবেশন চলাকালে সংসদকে জানান, রাজধানীতে বস্তির সংখ্যা প্রায় চার হাজার ৭২০টি। আর বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।
সাধারণত নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন কারণে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে আর ঝুপড়ি বস্তিতে আশ্রয় নিযে থাকে। ২০১২ সালে পরিচালিত বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ নতুন মানুষ যোগ হচ্ছে। এদের অধিকাংশই হতদরিদ্র, যারা রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে বা দিনমজুরি করে অর্থ উপার্জনের আশায় ঢাকায় আসে। বাসা বাড়ি বা উন্নত স্থাপনায় থাকার সাধ্য না থাকায় অধিকাংশই এসে উঠছেন নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে।
জাতিসংঘের ৫৫তম সাধারণ সভায় দরিদ্র্যতা কমিয়ে আনাকে মিলেনিয়াম গোল ডেভেলপমেন্টের (এমডিজি) একটি অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী উন্নতিও ঘটছে দেশে। দরিদ্র্যতার হার কমিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মাঝে নারী শিক্ষার প্রসার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি, আত্ম কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধকরণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য। এর পাশাপাশি কাজ করছে বেশ কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠানও।
বর্তমান সরকার ২০১৫ সালের মাঝে দারিদ্র্যতার হার ২২ শতাংশে এবং ২০২১ সালের মাঝে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে দেশে প্রায় ৫ কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করতো আর এর মাঝে ২ কোটি ৮৮ লাখ মানুষ ছিল অতি দরিদ্র। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে দরিদ্রসীমার নিচে আছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ। এর মাঝে ১ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র।