ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় পাবনায় ৮৬ ইটভাটা বন্ধের উপক্রম
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৮:৩৬,অপরাহ্ন ০৩ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ভারত থেকে কয়লা আসা বন্ধ থাকায় পাবনায় ৮৬টি ইটভাটা কয়লা সংকটে বন্ধ হওয়ার পথে। ইতোমধ্যে কয়লার অভাবে ৫০টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। চাহিদা মতো কয়লা আমদানি করতে না পারলে যে কোনো সময় বাকি এসব ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কয়লার অভাবে ৫০টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পরেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভাটা অবৈধভাবে কাট পুড়িয়ে ইট পোড়াচ্ছে। ফলে পাবনায় জ্বালানি কাঠের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভাটা মালিক, শ্রমিকসহ পাবনার অবকাঠামো উন্নয়ন মুখ থুবরে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। এতে শত শত কোটি টাকার ব্যাংক লোন নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে ভাটা মালিকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ৫ মাস ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় ইটভাটায় ইট তৈরি করে মজুত করে রাখা হয়েছে। কয়লার অভাবে পোড়াতে পারছে না এসব ইট। জেলায় বর্তমানে ভাটার সংখ্যা রয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে জিগজাগ ভাটা রয়েছে ৩২টি। এই ভাটা কয়লা ছাড়া চলে না। বাকি ৫৬টি কয়লা ছাড়াও চালানো যায়। এসব ভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পাবনায় ব্যাপক জ্বালানি কাঠের সংকট দেখা দিয়েছে। এসব ভাটাগুলো গত বছর পরিবেশ অধিপ্তর কাঠ পোড়ানোর দায়ে বন্ধ করে দিয়েছিলো। এদের মধ্যে ২৭ টি হাই কোর্টে রিট করে ভাটা চালানোর অনুমতি পেয়েছে। বাকিগুলো নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেদারছে কাঠ পোড়াচ্ছে।
পাবনা জেলা ইট প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কাশেম বলেন, আমার তিনটি ভাটা ছিল। গত বছর থেকে লোকশান হওয়াতে দুটি ভাটা ইতোমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে একটি ভাটা চলছে। কয়লা আমদানি স্বাভাবিক না হলে যে কোনো সময় এটিও বন্ধ করে দিতে হবে। দেড় কোটি টাকা ব্যাংক লোন ভাটা বিক্রি ছাড়া লোন পরিশোধের কোনো রাস্তার আমার সামনে নেই।
তিনি আরও বলেন গত বছর এই সময়ে ৩০ ভাগ ইট পোড়ানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে একই সময়ে ১০ ভাগ ইটও পোড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আর এক মাস দেখব, যদি কয়লা সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে ভাটা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
মালিকের পাশাপাশি কয়লা আমদানিকারকরাও বিপাকে পড়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে কয়লা পরিবহনের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক। মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।
শ্রমিকরা জানান, বাধ্য হয়েই অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছে। অনেকেই শহরে গিয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে।
জেলা ইট প্রস্তুককারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, এই ইটের সাথে দেশের অনেক কিছু জড়িত। আমরা কয়লার অভাবে ইট পোড়াতে পারছি না। ফলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন থমকে গেছে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরী তাদের উৎপাদিত সিমেন্ট বিক্রি করতে পারছে না। রডের দোকানে রট বিক্রিও নেই। ফলে রাজ মিন্ত্রিরা কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে সরকার প্রচুর টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি আরও বলেন দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ এক মাত্র কয়লা সমস্যার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন।
মেসার্স এসএন্ড কে ব্রিক্সের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, প্রতি বছর তার তিনটি ভাটায় চার হাজার টোন কয়লা লাগে। গত বছর প্রতি টোন তিনি কিনেছেন ৮ হাজার টাকায়। বর্তমানে সেই কয়লার দাম প্রতিটোন ২০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিন্তু ২০ হাজার টাকায়ও তাদের চাহিদা মোতাবেক কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় প্রতি হাজার ইট বিক্রি করেছেন। কিন্ত এবছর কয়লার দাম বেশি হওয়াতে তাদের উৎপাদন খরচই প্রতি হাজারে পড়ছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। ফলে এবার ইটের দাম ৮ হাজার টাকা না করলে তাদের পুজি হারাতে হবে। তিনি আরো বলেন তার তিনটি ভাটায় ৫০০ কর্মচারী কাজ করছে। ভাটা চালুর সময় ব্যাংক থেকে ৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এভাবে কয়লার সংকট চলতে থাকলে ভাটা বিক্রি করা ছাড়া ঋণ পরিশোধ সম্ভব হবে না। আর ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ৫ শত কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে।