ভারতের কাছে বাংলাদেশের ‘কলড্রপ প্রতিরোধ’ অনুকরণীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১৭:১০,অপরাহ্ন ১৭ নভেম্বর ২০১৪
নি্উজ ডেস্ক:: কলকাতার ব্যবসায়ী শান্তনু গাঙ্গুলি গত অক্টোবরে ঢাকার বিমানবন্দরে নেমেই একটি বিজ্ঞাপন দেখে অবাক হন। বিজ্ঞাপনটি ছিল বাংলাদেশের একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির। ভাষ্য ছিল এমন— মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়ে কেটে গেলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে বিনা মূল্যে এক মিনিট কথা বলতে পারবেন গ্রাহকেরা। শান্তনুর বিস্মিত হওয়ার কারণ হলো, নিজের দেশ ভারতে এমন সুবিধা পান না। ফোনে কথা বলতে গিয়ে লাইন কেটে যাওয়ার এ সমস্যা থেকে অপারেটর পরিবর্তন করেও মুক্তি পাননি তিনি। বাংলাদেশে অবস্থানকালে গ্রামীণফোনের নম্বর ব্যবহার করে তিনি কল কেটে যাওয়ার সমস্যায় পড়েননি। সম্প্রতি ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় শান্তনু গাঙ্গুলির এই অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানের ‘কল ড্রপ’ ক্ষতিপূরণ উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। অবশ্য এও বলা হয়েছে যে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, কলড্রপ দুই শতাংশের মধ্যে থাকলে তা গ্রহণযোগ্য। আর ভারতেও এ হার দুই শতাংশ।
ফোনে কথা বলার মান বাড়াতে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশনা অনুযায়ী এ উদ্যোগ নেয় গ্রামীণফোন। দেশের গ্রাহকদের জন্য অবশ্য প্রথম কলড্রপ ক্ষতিপূরণ সুবিধা দেওয়া শুরু করে বাংলালিংক। এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে এ সেবা দেওয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আর গ্রামীণফোন ১ অক্টোবর থেকে গ্রাহকদের এ সুবিধা দেওয়া শুরু করে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভারতের গণমাধ্যমে গ্রামীণফোনের কলড্রপ ক্ষতিপূরণের প্রশংসাকে পুরো বাংলাদেশেরই অর্জন বলে মন্তব্য করেন গ্রামীণফোনের বহিঃযোগাযোগ বিভাগের প্রধান সৈয়দ তালাত কামাল। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে কলড্রপ খুবই কম। প্রযুক্তিগত স্বাভাবিক সীমাবদ্ধতার কারণে যে স্বল্প পরিমাণ কলড্রপ গ্রাহকেরা পাচ্ছেন, তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রামীণফোন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
বিটিআরসির নির্ধারিত মান অনুযায়ী, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কলড্রপের হার তিন শতাংশের কম হলে তা হবে মানসম্পন্ন সেবা। অর্থাৎ কোনো কোম্পানির প্রতি ১০০ কলে যদি তিনটির বেশি ড্রপ না হয় তাহলে তাদের সেবাকে মানসম্পন্ন ধরা হবে। আর বিটিআরসিতে অপারেটরদের জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের তিন শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবির কলড্রপের হার এক শতাংশের কম, যা বিটিআরসির নির্ধারিত মানের মধ্যেই রয়েছে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সময় ও স্থান ভেদে ভারতে ৫ থেকে ১০টি কলের একটি কলড্রপের শিকার হয়।
বাংলাদেশের কলড্রপ ক্ষতিপূরণের সুবিধার বিষয়ে বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারস ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক অরপিতা পাল আগারওয়াল বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এটি একটি আকর্ষণীয় সুযোগ। ভারতের মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কারিগরি পার্থক্যের বিষয়টি তুলে ধরে অরপিতা আরও বলেন, বাংলাদেশের একটি কলড্রপের সঙ্গে নেটওয়ার্কের মানের বিষয়টি জড়িত। আর ভারতে কলড্রপ মূলত তরঙ্গ স্বল্পতার (স্পেকট্রাম শর্টেজ) সঙ্গে সম্পর্কিত।
বাংলালিংকের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শেহজাদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের কলড্রপের সেবার প্রশংসা করা হয়েছে, এটি আমাদের জন্য আনন্দের। কলড্রপে মিনিট ফেরত পাওয়ার এ সুযোগকে গ্রাহকেরাও বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।’ গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের এই সেবায় গ্রাহকেরা খুশি। এমনই একজন ঢাকা কলেজের ছাত্র জুলফিকার আলী। অনেক দিন থেকেই তিনি গ্রামীণফোন ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘বিনা মূল্যে এক মিনিট কথা বলার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, এটি একটি ভালো ব্যাপার। এতে কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থেই আরও সচেতন হবে।’